অথবা, সমস্যা কী? সমস্যার উৎসমূলগুলো আলোচনা কর।
অথবা, গবেষণামূলক সমস্যা সৃষ্টির মূল উৎসগুলো আলোচনা কর।
অথবা, গবেষণা সমস্যার মূলে কী কী উৎস রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমস্যা কী? সমস্যার মূল উৎসগুলো আলোচনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : সমস্যাকে কেন্দ্র করেই বিজ্ঞানের জিজ্ঞাসা ও গবেষণা শুরু হয়। তাই সমস্যাকে বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সমস্যা ছাড়া সমাধানের যেমন কোন অর্থ হয় না। তেমনি সমস্যা ছাড়া বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ও কোন অর্থ হয় না। যে কোন গবেষণা করার জন্য প্রথমেই সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে হবে। সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে না পারলে তা সমাধান করাও সম্ভব হয় না। তাই সমস্যা নির্বাচন, সমস্যা সংজ্ঞায়ন ও সমস্যা ব্যাখ্যাকরণ ও সমস্যা নিয়ে কাজ গবেষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুতরাং সার্থকভাবে গবেষণা পরিচালনা করার জন্য সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমস্যা/গবেষণা সমস্যা : বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধান কার্যের মূলে থাকে একটি সমস্যা। সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানী গবেষণা কার্য আরম্ভ করেন এবং সমস্যার সমাধান হলে তার অনুসন্ধান কার্য শেষ হয়। বিজ্ঞানীরা তাদের বৈজ্ঞানিক সমস্যা
শনাক্তকরণের মাধ্যমেও আবিষ্কারের কাজ শুরু করেন।
গবেষণার সমস্যাকে সংজ্ঞায়িত করতে কারলিঙ্গার (Kerlinger) বলেন যে, “সমস্যা হলো এমন একটি প্রশ্নবোধক বাক্য বা উক্তি, যা দুই বা ততোধিক চলের মধ্যকার সম্পর্ককে জানতে চায়।”
সমস্যার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ফিসার, লেইং স্টোয়েকল (Fisher, Laing and Stoeckel, 1991) বলেন, “সমস্যা .হলো এক ধরনের প্রত্যক্ষিত অসুবিধা, কোন বস্তুর অবস্থানগত কারণে অনুভূত অস্বাচ্ছন্দ্য, কারো প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যকার অসামঞ্জস্যতা।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞা থেকে জানা যায় যে, কোন গবেষণায় নিরপেক্ষ চলের সাথে সাপেক্ষ চলের সম্পর্কের প্রকৃতি জানাটাই হচ্ছে গবেষণায় ব্যবহৃত সমস্যা। এই ধরনের সমস্যা সমাধান করার জন্যই প্রয়োজন হয় গবেষণার। এ গবেষণার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়। তাই গবেষণার ফলাফল সমস্যাটির একটি পরিমাপকৃত ও গ্রহণযোগ্য সমাধান প্রদান
করে থাকে।
সমস্যার উৎস : সমস্যা কিভাবে সৃষ্টি হয় তা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। গবেষণামূলক সমস্যার উৎসমূল গবেষণার চিন্তার মধ্যেই নিহিত থাকে। গবেষক নিজেও একজন। তাই তার ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতেই পারে। গবেষকের সমস্যাই গবেষণামূলক সমস্যা নয়। কেবল গবেষণা কার্যে ব্যবহারের জন্য তার চিন্তায় যে সকল সমস্যার জন্ম দেয় তাই হচ্ছে গবেষণামূলক সমস্যা। গবেষক গবেষণামূলক সমস্যার উদ্ভব করলেও এসব সমস্যাগুলো তার চিন্তায় কতকগুলো উৎসমূলক থেকে উদ্ভূত। গবেষণামূলক সমস্যা সৃষ্টির এসব উৎসমূল নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. পূর্ববর্তী গবেষণা : পূর্ববর্তী গবেষণা সমস্যার একটি উৎস। যখন একটি গবেষণা শুরু করে তার কার্যসম্পাদন করা হয় তখন গবেষণার ফলাফলকে ঘিরে একাধিক গবেষণার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এসব সম্ভাবনাগুলো সমস্যাকে কেন্দ্ৰ করেই গড়ে উঠে। এমনিভাবে একটি গবেষণা শেষ করার পর পর্যায়ক্রমে আরো একাধিক গবেষণামূলক সমস্যার উৎপত্তি ঘটে। এসব সমস্যাগুলো পূর্ববর্তী গবেষণার বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে থাকে।
২. সাহিত্য পর্যালোচনা : গবেষণায় সমস্যার জন্য সাহিত্য পর্যালোচনাও প্রয়োজন। গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য, সংবাদ,ইতিহাস, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করাকে সাহিত্য বলে। এ সমস্ত গবেষণামূলক সাহিত্য পড়ে ব্যাখ্যা, পর্যালোচনা, আলোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয়। বিভিন্ন গবেষণা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর নতুন নতুন গবেষণামূলক সমস্যার উদ্ভব ঘটে। তাই : গবেষণা সমস্যার ক্ষেত্রে সাহিত্য পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. অন্তদর্শন : সমস্যার উৎসমূলে অন্তদর্শনেরও ভূমিকা রয়েছে। যে সমস্ত লোক গবেষণা কাজে নিয়োজিত থাকে তাদেরকে প্রথমে সমস্যাটিকে চিহ্নিত করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। গবেষকরা যে কোন ব্যস্ত থাকুক না কেন?
তাদের প্রত্যক্ষণে সবসময় গবেষণার বিষয়বস্তু জাগ্রত থাকে। ফলে যে কোন সময় গবেষণা সংক্রান্ত নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে। নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে বিধায় এই প্রক্রিয়াকে অন্তদর্শন বলে। অন্তদর্শনের মাধ্যমে কেবল সমস্যার উদ্ভবই হয় না।বরং এ সমস্যা সমাধানের উপায়ও পাওয়া যায়। অন্তদর্শনের মাধ্যমে যে সমস্যা বা সমাধান পাওয়া যায় সেগুলোকে।মনোবিজ্ঞানীরা শিক্ষণের প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেছেন।


