সমষ্টি উন্নয়নের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

অথবা, সমষ্টি উন্নয়ন এর বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমষ্টি উন্নয়ন এর প্রকৃতিসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমষ্টি উন্নয়ন এর মানদণ্ড বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমষ্টি উন্নয়ন ধারণাটি বর্তমান বিশ্বে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সমাজকর্মে সমষ্টি উন্নয়ন বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত কোন সমষ্টির জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জনগণ ও সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপই হল সমষ্টি উন্নয়ন। সমষ্টি উন্নয়ন অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সমষ্টি উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য : সমষ্টি কোন দরিদ্র ও অবহেলিত সমষ্টির জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। সমষ্টি উন্নয়নের সংজ্ঞা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলে এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। নিম্নে সমষ্টি উন্নয়নের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হল ঃ
১. গ্রামোন্নয়ন : সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল গ্রাম উন্নয়ন। সমষ্টি উন্নয়ন ধারণাটি এসেছে মূলত কোন অবহেলিত ও অনুন্নত এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের উদ্দেশ্য নিয়ে। অনুন্নত ও অবহেলিত এলাকা বলতে এখানে গ্রামকেই বুঝানো হয়েছে। সুতরাং গ্রামীণ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সমষ্টি উন্নয়নের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
২. যৌথ প্রচেষ্টা : সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যৌথ প্রচেষ্টা। সাধারণত কোন অনুন্নত এলাকার জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রম গৃহীত হয়। এ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ ও সরকার উভয়ে যৌথভাবে কাজ করে থাকে। তাই যৌথ প্রচেষ্টা সমষ্টি উন্নয়নের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
৩. জনগণের অংশগ্রহণ : সমষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল অনুন্নত এলাকার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি
গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। তাই সমষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার ও জনগণ যৌথভাবে কাজ করে। এতে করে
উন্নয়ন কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। তাই দেখা যাচ্ছে জনগণের অংশগ্রহণ সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৪. বহুমুখী কর্মসূচি : বহুমুখী কর্মসূচি সমষ্টি উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন করতে হলে একমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে সম্ভব নয়। কেননা একমুখী কর্মসূচি যে কোন একটি দিকে উন্নতি করতে সাহায্য করে। অথচ দরিদ্র জনগণ হল সবদিক থেকে অনুন্নত। তাই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সুষম উন্নয়নের জন্য সমষ্টি উন্নয়ন বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।
৫. অনুভূত চাহিদার গুরুত্ব প্রদান : অনুভূত চাহিদাকে গুরুত্ব প্রদান সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেসব জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে তাদের কি কি চাহিদা ও সমস্যা রয়েছে তার প্রতি গুরুত্ব প্রদান সমষ্টি উন্নয়নের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কারণ লক্ষ্য দলের চাহিদাকে গুরুত্ব না দিলে কর্মসূচি ফলপ্রসূ হবে না।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, সমষ্টি উন্নয়ন কোন এলাকার দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সারা বিশ্বব্যাপী অনুন্নত এলাকার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। তবে সমষ্টি উন্নয়নের বৈশিষ্ট্যগুলো উন্নয়ন কার্যক্রমে অবশ্যই প্রতিফলিত করতে হবে। তাহলে জনগণের উন্নয়ন সম্ভব হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%bf/