অথবা, সমষ্টি উন্নয়নের ধাপগুলো লিখ?
অথবা, সমষ্টি উন্নয়নের স্তরগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, সমষ্টি উন্নয়নের পর্যায়গুলো আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমষ্টি উন্নয়ন সমাজকর্মের একটি মৌলিক পদ্ধতি। সমষ্টি উন্নয়ন সমষ্টির. জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধনে নিয়োজিত সরকার ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টা। জনগণের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু সে তুলনায় সম্পদ সীমিত। এ সীমিত সম্পদ দিয়ে কিভাবে জনগণের অধিক কল্যাণ সাধন করা যায় তার ব্যবস্থা করে সমষ্টি উন্নয়ন। জনগণের এ ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধনের জন্য সমষ্টি উন্নয়ন কতিপয় লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, নীতিমালা ও প্রক্রিয়া ঠিক করেছে। সমষ্টি উন্নয়নে সমষ্টি উন্নয়ন প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশ, কাল ও সময়ভেদে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয় ।
সমষ্টি উন্নয়নের বিভিন্ন প্রক্রিয়া : সমষ্টি জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সমাজকর্ম সমষ্টি উন্নয়নের বিভিন্ন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে। জনসমষ্টির চাহিদা, সম্পদ অনুসারে এ প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহৃত হয়।
Murry G. Ross তাঁর ‘Community Organization Theory and Principles (1955) গ্রন্থে সমষ্টি। উন্নয়নের তিনটি প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন । যথা ঃ
১. একমুখী কার্যপ্রক্রিয়া (Single Target Approach).
২. বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া (Multi Target Approach) এবং আন্তঃসম্পদ প্রক্রিয়া (Inner Resources Approach)
নিম্নে এ প্রক্রিয়াগুলো আলোচনা করা হল :
১. একমুখী কার্যপ্রক্রিয়া (Single Target Approach) : সমষ্টি উন্নয়নের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া হল একক কার্যপ্রক্রিয়া। একক কার্যপ্রক্রিয়ায় কোন এলাকার সমষ্টির সমস্যা সমাধানের জন্য বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ আনা হয়। বাইরের বিশেষজ্ঞ সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থান করে ঐ এলাকার জনগণ, তাদের সম্পদ, চাহিদা ইত্যাদি সম্পর্কে খোঁজখবর
নেন। এরপর ঐ এলাকার জনগণের সাথে আলাপ আলোচনা করে একটি বিষয়ে উন্নতির কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। এ কর্মসূচি যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় সেজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে সজাগ ও সচেতন করে তোলেন। সেজন্য তিনি সভা, সমিতি, সেমিনার, চিত্র প্রদর্শন ইত্যাদির ব্যবস্থা করেন। যেমন- বাংলাদেশে বয়স্ক লোকদের শিক্ষিত
করার জন্য বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। এটি একমুখী কার্যপ্রক্রিয়ার উদাহরণ। এছাড়াও টীকা দান, পরিবার পরিকল্পনা, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি।
২. বহুমুখী কার্যপ্রত্রিয়া (Multi Target Approach) : সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম প্রক্রিয়া হল বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া। সমাজ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে সমাজে বহুমুখী ও জটিল সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এসব জটিল ও বহুমুখী সমস্যা সমাধানের জন্য বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। সাধারণত কোন এলাকার সমষ্টির জটিল
ও বহুমুখী আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য এ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। এ প্রক্রিয়ায় দেশী ও বিদেশী বিশেষজ্ঞ একই সাথে একাধিক বিষয়ে কাজ করেন। এক সাথে তারা সংশ্লিষ্ট সমষ্টির সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। সেজন্য বিশেষজ্ঞগণ সমষ্টির সাথে মিশে তাদের সমস্যা ও চাহিদা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এসব চাহিদার আলোকে তারা বহুমুখী কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। এ বহুমুখী কর্মসূচিগুলো একসাথে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমষ্টির সব সমস্যার সমাধান করা হয়।
ফলে উক্ত সমষ্টির দ্রুত পরিবর্তন আসে ও উন্নতি সাধিত হয়।
৩. আঃসম্পদ প্রক্রিয়া (Inner Resources Approach) : সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম প্রক্রিয়া হল আন্তঃসম্পদ প্রক্রিয়া। যখন কোন এলাকার সমষ্টির সমস্যা সমাধানে ঐ এলাকার জনগণকেই কাজে লাগানো হয় তখন তাকে
আন্তঃসম্পদ প্রক্রিয়া বলে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ নিজেরাই ঠিক করবে তাদের কি কি সমস্যা রয়েছে, তাদের কি কি সম্পদ রয়েছে, তাদের চাহিদা কি ইত্যাদি। এরপর তারা সম্
পদ ও সমস্যার আলোকে নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমষ্টির জনগণ তাদের সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করে তাকে আন্তঃসম্পদ প্রক্রিয়া বলা হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ অনুন্নত ও সমস্যাসংকুল দেশ, অন্যদিকে সমষ্টি উন্নয়নও বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব দেশের সব ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে থাকে। তবে বাংলাদেশের সমস্যা ও তার জটিলরূপ, বহুমুখিতা বিচার বিশ্লেষণ করে বলা যায় এদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য বহুমুখী কার্যপ্রক্রিয়া ব্যবহার সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য।