উত্তর ঃ | ভূমিকা ঃ বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে, বহুমুখী কর্মসূচি বিপুলসংখ্যক লোকবল এবং অন্যদিকে সময় অর্থ ও সম্পদের অপ্রতুলতা এমনই পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কার্যকারিতা আনয়নে সমন্বয় সাধন এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় আবশ্যক। সেদিক থেকে সমন্বয় ব্যবস্থাপনার একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি। একে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারও বলা হয়
→ সমন্বয়ের প্রকারভেদঃ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সমন্বয় সাধন করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এজেন্সী বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সমন্বয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রশাসনিক সমন্বয়ে প্রধানত দুইটি ভাগ লক্ষ্য করা যায়-
(ক) প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সময়।
(খ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়/ বাহ্যিক সমন্বয়।
(ক) প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সময় ঃ বর্তমান সময়ে মানুষের বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের জন্য সংগঠনসমূহকে বহুবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। আর এ কারণেই সংগঠনসমূহ বিভিন্ন রকম হয়ে কার্য সম্পাদন করে। অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারসাম্য এবং উপযোজন আনয়নে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও প্রক্রিয়াসমূহের মধ্যে পারস্পরিক
সম্পর্ক ও সমন্বয় থাকা দরকার। অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের ক্ষেত্রসমুহ হলো :
১. সংস্থার বিভিন্ন বিভাগের মাঝে সমন্বয়।
২. সংস্থায় বিভিন্ন কর্মীদের মাঝে সমন্বয়।
৩. সংস্থার বোর্ডের বিভিন্ন উপকমিটির মাঝে সমন্বয়।
৪. সংস্থার বোর্ড ও কর্মীদের মাঝে সমন্বয়।
উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহ ছাড়াও সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি এবং অভ্যন্তরীণ নীতি ও পরিকল্পনার মাঝেও সমন্বয় প্রয়োজন।
(ক) বিভিন্ন সংস্থার মাঝে সমন্বয় ঃ সাংগঠনিক লক্ষ্য পূরণে সংগঠনসমূহ সব সময় স্বয়ংসম্পূর্ণ নাও হতে পারে।
তাই অনেক ক্ষেত্রেই সংগঠনসমূহকে বাহ্যিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল হতে লক্ষ্য করা যায়। এ সমস্ত ক্ষেত্রে তাই উক্ত সংগঠনকে বাহ্যিক অন্যান্য সংগঠনের সাথে কার্যকর যোগাযোগ ও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে স্বীয় লক্ষ্যে উপনীত হতে প্রয়াসী হতে হয় । প্রকৃতিগত দিক বিবেচনায় বাহ্যিক সমন্বয়ে আবার দুটি রূপ পরিলক্ষিত হয়।
১. কার্যকর সমন্বয় ঃ কার্যগত সমন্বয় হলো এমন এক ধরনের বাহ্যিক সমন্বয় যেখানে এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা তাদের কর্মকাণ্ড বা কার্যক্রমের মাঝে সমন্বয় সাধন করে। যেমন- বাংলাদেশ সমাজ কল্যাণ সমিতি ও নিউয়র্ক সমাজকল্যাণ সমিতির মধ্যে কার্যগত সমন্বয় রয়েছে।
২. ভৌগোলিক সমন্বয় ঃ একটি সমাজের বসবাসরত বিভিন্ন জনসমষ্টির প্রয়োজন বহুমুখী। তাই এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট জনসমষ্টির বহুমুখী প্রয়োজন পূরণে বহুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। একটি সমষ্টিতে বা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার জনগণের প্রয়োজন পূরণে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচিতে নিয়োজিত এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মাঝে যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয় সেটাকে ভৌগোলিক সমন্বয় বলে। যেমন- জামালপুর জেলার ফুলবাড়ীয়া এলাকায় শিশু, নারী, বেকারত্ব সকলের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রতি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমন্বয়কে আবার সমান্তরাল ও উলম্ব দুভাগে বিবেচনা করা যায় । তবে সমন্বয়ের এই রূপ দুটি মূলত : অভ্যন্তরীণ সমন্বয়েরই পর্যায়ভুক্ত।
৩. সমান্তরাল সমন্বয় ঃ এই ধরনের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতা কাঠামোর সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদের মাঝে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখা হয়।
৪. উলম্বর সমন্বয় ঃ যখন প্রশাসনিক ক্ষমতা কাঠামোর ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির তথা প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানের পৃথক পৃথক স্তরের মাঝে সমন্বয় সাধিত হয় তখন তা উলম্ব সমন্বয় হ
িসাবে বিবেচিত হয়। যেমন- প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের সাথে উপপরিচালক বা অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের সাথে যে ধরনের সমন্বয় পরিলক্ষিত হয়।
→ সমন্বয় সাধনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা ঃ আধুনিক বৃহৎ জটিল সাংগঠনিক ব্যবস্থায় সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব অনস্বীকার্য । যে কোনো সংস্থার লক্ষ্যার্জনের পূর্ব শর্ত সমন্বয় সাধন। নিম্নে এটির গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা দেওয়া হলো :
N.H.Newman তিনটি কারণে সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো :
(ক) সংগঠনের বিভিন্ন কর্মচারীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত পরিহার করা এবং সংগঠনের বিভিন্ন কার্যের মধ্যে পুনরাবৃত্তি হতে না দেয়া।
(খ) কোনো একটি বিশেষ কার্যকে অন্যান্য কার্যের চেয়ে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা থেকে রক্ষা করা।
(গ) সাম্রাজ্য স্থাপনের উঠতি প্রবণতা এবং সংগঠনের বিভিন্ন এককের মধ্যে ক্ষমা লিপ্সা খর্ব করা। সার্বিকভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :
১. কাজের দ্বৈততা রোধ ঃ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগ ও ব্যক্তি বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়োজিত থাকে। কাজের দ্বৈততা রোধ করে বিভাগের দায়িত্বগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত করার কাজটাই করে থাকে সমন্বয়।
২. ভারসাম্য রক্ষা ঃ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় সাধন আবশ্যক। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিভিন্ন কর্মচারীর বিভিন্ন দক্ষতা, আচরণ ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্যসমূহ দূর করে সংগঠন সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রেখে কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
৩. ঐক্য প্রতিষ্ঠা ঃ সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় হিংসা- বিদ্বেষ প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিভিন্ন বিভাগ ও
কর্মচারী কর্মকর্তাদের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
৪. দ্বন্দ্ব ও সংঘাত নিরসন ঃ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগগুলো নিজ নিজ বিভাগকে প্রধান করে দেখার প্রবণতার ফলে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত নিরসন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
৫. অপচয় রোধ ঃ সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু সমন্বয় না থাকলে বিভিন্ন বিভাগ ও কার্যক্রমের মধ্যে বন্ধন গড়ে উঠে না। ফলে অর্থ সময় ও শ্রমের অপচয় ঘটে। সমন্বয়ের মাধ্যমে সকল বিভাগকে একই সূত্রে আবদ্ধ করা যায় বলে অপচয় রোধ করা সম্ভব।
৬. কর্মসূচি একত্রীকরণ ঃ একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বা পরিকল্পনা থাকে। সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব কর্মসূচিকে একত্রিত করা হয়। কর্মসূচি একত্রীকরণ ও সমন্বয় না থাকলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাহত হত।
৭. প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃতি ঃ প্রতিষ্ঠানের বা সংগঠনের আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে সমন্বয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। তাই অধ্যাপক ফিফনার ও শেরউড বলেছেন- সংগঠনের আয়তন যখন গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন এর কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জটিলতা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি লাভ করে। তাই বলা যায় বিস্তৃত জটিল বিভাগগুলোর মধ্যে যোগসুত্র রক্ষার একমাত্র উপায় হল সমন্বয়।
৮ . বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু ঃ সাংগঠনিক ক্রিয়াকল্প বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো সমন্বয় সাধন। এ বিষয়ে অধ্যাপক রেইলি বলেন বৃহদায়তন সংগঠনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাংগঠনিক বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু হল সমন্বয় সাধন।
৯. যোগাযোগ রক্ষা ঃ প্রশাসনিক কার্যে যোগাযোগ রক্ষা করাও একটি অপরিহার্য দিক। আর দৃষ্টিকোণ হতে সংগঠনের সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের মধ্যে সহযোগিতা ও যোগাযোগ রক্ষা করার মাধ্যমে সংগঠনের উদ্দেশ্য অর্জনে সাহায্য করে।
১০. কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন ঃ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সমন্বয়ের গুরুত্ব অপরিসীম প্রতিষ্ঠানের বিভি
ন্ন বিভাগের লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সমন্বয় সাধন করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
১১. সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার : সম্পদ হচ্ছে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। সম্পদের যথাযথ সরবরাহ এবং ব্যবহার ছাড়া এজেন্সীর উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে গৃহীত কোনো কর্মসূচি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমন্বয়ের মাধ্যমেই
সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে স্বল্প সম্পদ দিয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করা সম্ভব
১২. গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা ঃ সমাজে বসবাসকারী মানুষের চাহিদার প্রেক্ষিতে গড়ে উঠে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণ আবশ্যক। সমন্বয়ের মাধ্যমেই সকলের অংশগ্রহণ এবং মতামত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।
১৩. অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি : এক বা একাধিক উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই একটি দল সংগঠিত হয়। আর সম্পদের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তথা দলীয় গতিশীলতার উপর দলীয় সাফল্য নির্ভর করে। সদস্যদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অনুকূল কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং লক্ষ্যার্জন সহজ হয়।
১৪. মনোবল বৃদ্ধি ঃ সমন্বয়ের মাধ্যমে সংগঠনের প্রতিটি বিভাগের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলেই স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারে। যা কাজের প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
১৫. দক্ষতা সৃষ্টি ঃ একটি প্রতিষ্ঠানে অনেক কর্মদক্ষতা কর্মচারী কাজ করে। এসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হলে তাদের দক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য সার্বিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক সংগঠন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । প্রশাসনিক সংগঠন নিশ্চিত করতে হলে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সমন্বয় সাধন করতে হবে । সমন্বয় সাধন । বর্তমান যুগে কোনো প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। এবং তার উদ্দেশ্য সার্বিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না। বিশেষ করে কর্মীদের কাজের দায়িত্ব, সততা, বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা আনয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমন্বয়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
সমন্বয় কত প্রকার এবং কি কি? একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনে সমন্বয়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তর ঃ | ভূমিকা ঃ বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে, বহুমুখী কর্মসূচি বিপুলসংখ্যক লোকবল এবং অন্যদিকে সময় অর্থ ও সম্পদের অপ্রতুলতা এমনই পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কার্যকারিতা আনয়নে সমন্বয় সাধন এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় আবশ্যক। সেদিক থেকে সমন্বয় ব্যবস্থাপনার একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি। একে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারও বলা হয়
→ সমন্বয়ের প্রকারভেদঃ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সমন্বয় সাধন করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এজেন্সী বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সমন্বয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রশাসনিক সমন্বয়ে প্রধানত দুইটি ভাগ লক্ষ্য করা যায়-
(ক) প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সময়।
(খ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়/ বাহ্যিক সমন্বয়।
(ক) প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সময় ঃ বর্তমান সময়ে মানুষের বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের জন্য সংগঠনসমূহকে বহুবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। আর এ কারণেই সংগঠনসমূহ বিভিন্ন রকম হয়ে কার্য সম্পাদন করে। অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারসাম্য এবং উপযোজন আনয়নে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও প্রক্রিয়াসমূহের মধ্যে পারস্পরিক
সম্পর্ক ও সমন্বয় থাকা দরকার। অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের ক্ষেত্রসমুহ হলো :
১. সংস্থার বিভিন্ন বিভাগের মাঝে সমন্বয়।
২. সংস্থায় বিভিন্ন কর্মীদের মাঝে সমন্বয়।
৩. সংস্থার বোর্ডের বিভিন্ন উপকমিটির মাঝে সমন্বয়।
৪. সংস্থার বোর্ড ও কর্মীদের মাঝে সমন্বয়।
উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহ ছাড়াও সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি এবং অভ্যন্তরীণ নীতি ও পরিকল্পনার মাঝেও সমন্বয় প্রয়োজন।
(ক) বিভিন্ন সংস্থার মাঝে সমন্বয় ঃ সাংগঠনিক লক্ষ্য পূরণে সংগঠনসমূহ সব সময় স্বয়ংসম্পূর্ণ নাও হতে পারে।
তাই অনেক ক্ষেত্রেই সংগঠনসমূহকে বাহ্যিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল হতে লক্ষ্য করা যায়। এ সমস্ত ক্ষেত্রে তাই উক্ত সংগঠনকে বাহ্যিক অন্যান্য সংগঠনের সাথে কার্যকর যোগাযোগ ও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে স্বীয় লক্ষ্যে উপনীত হতে প্রয়াসী হতে হয় । প্রকৃতিগত দিক বিবেচনায় বাহ্যিক সমন্বয়ে আবার দুটি রূপ পরিলক্ষিত হয়।
১. কার্যকর সমন্বয় ঃ কার্যগত সমন্বয় হলো এমন এক ধরনের বাহ্যিক সমন্বয় যেখানে এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা তাদের কর্মকাণ্ড বা কার্যক্রমের মাঝে সমন্বয় সাধন করে। যেমন- বাংলাদেশ সমাজ কল্যাণ সমিতি ও নিউয়র্ক সমাজকল্যাণ সমিতির মধ্যে কার্যগত সমন্বয় রয়েছে।
২. ভৌগোলিক সমন্বয় ঃ একটি সমাজের বসবাসরত বিভিন্ন জনসমষ্টির প্রয়োজন বহুমুখী। তাই এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট জনসমষ্টির বহুমুখী প্রয়োজন পূরণে বহুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। একটি সমষ্টিতে বা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার জনগণের প্রয়োজন পূরণে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচিতে নিয়োজিত এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মাঝে যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয় সেটাকে ভৌগোলিক সমন্বয় বলে। যেমন- জামালপুর জেলার ফুলবাড়ীয়া এলাকায় শিশু, নারী, বেকারত্ব সকলের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রতি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমন্বয়কে আবার সমান্তরাল ও উলম্ব দুভাগে বিবেচনা করা যায় । তবে সমন্বয়ের এই রূপ দুটি মূলত : অভ্যন্তরীণ সমন্বয়েরই পর্যায়ভুক্ত।
৩. সমান্তরাল সমন্বয় ঃ এই ধরনের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতা কাঠামোর সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদের মাঝে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখা হয়।
৪. উলম্বর সমন্বয় ঃ যখন প্রশাসনিক ক্ষমতা কাঠামোর ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির তথা প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানের পৃথক পৃথক স্তরের মাঝে সমন্বয় সাধিত হয় তখন তা উলম্ব সমন্বয় হ
িসাবে বিবেচিত হয়। যেমন- প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের সাথে উপপরিচালক বা অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের সাথে যে ধরনের সমন্বয় পরিলক্ষিত হয়।
→ সমন্বয় সাধনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা ঃ আধুনিক বৃহৎ জটিল সাংগঠনিক ব্যবস্থায় সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব অনস্বীকার্য । যে কোনো সংস্থার লক্ষ্যার্জনের পূর্ব শর্ত সমন্বয় সাধন। নিম্নে এটির গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা দেওয়া হলো :
N.H.Newman তিনটি কারণে সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো :
(ক) সংগঠনের বিভিন্ন কর্মচারীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত পরিহার করা এবং সংগঠনের বিভিন্ন কার্যের মধ্যে পুনরাবৃত্তি হতে না দেয়া।
(খ) কোনো একটি বিশেষ কার্যকে অন্যান্য কার্যের চেয়ে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা থেকে রক্ষা করা।
(গ) সাম্রাজ্য স্থাপনের উঠতি প্রবণতা এবং সংগঠনের বিভিন্ন এককের মধ্যে ক্ষমা লিপ্সা খর্ব করা। সার্বিকভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :
১. কাজের দ্বৈততা রোধ ঃ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগ ও ব্যক্তি বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়োজিত থাকে। কাজের দ্বৈততা রোধ করে বিভাগের দায়িত্বগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত করার কাজটাই করে থাকে সমন্বয়।
২. ভারসাম্য রক্ষা ঃ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় সাধন আবশ্যক। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিভিন্ন কর্মচারীর বিভিন্ন দক্ষতা, আচরণ ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্যসমূহ দূর করে সংগঠন সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রেখে কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
৩. ঐক্য প্রতিষ্ঠা ঃ সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় হিংসা- বিদ্বেষ প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিভিন্ন বিভাগ ও
কর্মচারী কর্মকর্তাদের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
৪. দ্বন্দ্ব ও সংঘাত নিরসন ঃ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগগুলো নিজ নিজ বিভাগকে প্রধান করে দেখার প্রবণতার ফলে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত নিরসন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
৫. অপচয় রোধ ঃ সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু সমন্বয় না থাকলে বিভিন্ন বিভাগ ও কার্যক্রমের মধ্যে বন্ধন গড়ে উঠে না। ফলে অর্থ সময় ও শ্রমের অপচয় ঘটে। সমন্বয়ের মাধ্যমে সকল বিভাগকে একই সূত্রে আবদ্ধ করা যায় বলে অপচয় রোধ করা সম্ভব।
৬. কর্মসূচি একত্রীকরণ ঃ একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বা পরিকল্পনা থাকে। সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব কর্মসূচিকে একত্রিত করা হয়। কর্মসূচি একত্রীকরণ ও সমন্বয় না থাকলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাহত হত।
৭. প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃতি ঃ প্রতিষ্ঠানের বা সংগঠনের আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে সমন্বয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। তাই অধ্যাপক ফিফনার ও শেরউড বলেছেন- সংগঠনের আয়তন যখন গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন এর কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জটিলতা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি লাভ করে। তাই বলা যায় বিস্তৃত জটিল বিভাগগুলোর মধ্যে যোগসুত্র রক্ষার একমাত্র উপায় হল সমন্বয়।
৮ . বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু ঃ সাংগঠনিক ক্রিয়াকল্প বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো সমন্বয় সাধন। এ বিষয়ে অধ্যাপক রেইলি বলেন বৃহদায়তন সংগঠনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাংগঠনিক বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু হল সমন্বয় সাধন।
৯. যোগাযোগ রক্ষা ঃ প্রশাসনিক কার্যে যোগাযোগ রক্ষা করাও একটি অপরিহার্য দিক। আর দৃষ্টিকোণ হতে সংগঠনের সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের মধ্যে সহযোগিতা ও যোগাযোগ রক্ষা করার মাধ্যমে সংগঠনের উদ্দেশ্য অর্জনে সাহায্য করে।
১০. কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন ঃ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সমন্বয়ের গুরুত্ব অপরিসীম প্রতিষ্ঠানের বিভি
ন্ন বিভাগের লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক বা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সমন্বয় সাধন করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
১১. সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার : সম্পদ হচ্ছে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। সম্পদের যথাযথ সরবরাহ এবং ব্যবহার ছাড়া এজেন্সীর উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে গৃহীত কোনো কর্মসূচি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমন্বয়ের মাধ্যমেই
সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে স্বল্প সম্পদ দিয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করা সম্ভব
১২. গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা ঃ সমাজে বসবাসকারী মানুষের চাহিদার প্রেক্ষিতে গড়ে উঠে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণ আবশ্যক। সমন্বয়ের মাধ্যমেই সকলের অংশগ্রহণ এবং মতামত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।
১৩. অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি : এক বা একাধিক উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই একটি দল সংগঠিত হয়। আর সম্পদের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তথা দলীয় গতিশীলতার উপর দলীয় সাফল্য নির্ভর করে। সদস্যদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অনুকূল কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং লক্ষ্যার্জন সহজ হয়।
১৪. মনোবল বৃদ্ধি ঃ সমন্বয়ের মাধ্যমে সংগঠনের প্রতিটি বিভাগের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলেই স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পারে। যা কাজের প্রতি উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
১৫. দক্ষতা সৃষ্টি ঃ একটি প্রতিষ্ঠানে অনেক কর্মদক্ষতা কর্মচারী কাজ করে। এসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হলে তাদের দক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য সার্বিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক সংগঠন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । প্রশাসনিক সংগঠন নিশ্চিত করতে হলে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সমন্বয় সাধন করতে হবে । সমন্বয় সাধন । বর্তমান যুগে কোনো প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। এবং তার উদ্দেশ্য সার্বিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না। বিশেষ করে কর্মীদের কাজের দায়িত্ব, সততা, বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা আনয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমন্বয়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।