উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ কাজের বিভাগীয়করণ যত অধিক হবে ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাও তত বাড়বে এবং কাজের তদারকিকরণ ও সমন্বয়ের প্রয়োজন তত বেশি হয়ে পড়বে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে তাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে একত্রিত করে তখনই সমন্বয় নীতির আবির্ভাব ঘটে। সমন্বয়ের ধরন বা প্রকারভেদঃ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সমন্বয় সাধন করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা
এজেন্সীর বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম্নে ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো :
উপরিউক্ত ছক অনুযায়ী প্রশাসনিক সমন্বয়কে প্রধানত ছটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়/অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও
২. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়/বাহ্যিক সমন্বয়।
→ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ঃ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারসাম্য এবং উপযোজন আনয়নে সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও প্রক্রিয়াসমূহের পরস্পর সম্পর্কিত ও সমন্বিত করা হয়। অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের ক্ষেত্রসমূহ হলো :
(ক) সংস্থায় বিভিন্ন বিভাগের মাঝে সমন্বয়।
(খ) সংস্থায় বিভিন্ন কর্মীদের মাঝে সমন্বয়।
(গ) সংস্থায় বোর্ডের বিভিন্ন উপকমিটির মাঝে সমন্বয়।
(ঘ) সংস্থায় বোর্ড ও কর্মীদের মাঝে সমন্বয়।
→ বিভিন্ন সংস্থার মাঝে সমন্বয় ঃ সাংগঠনিক লক্ষ্য পূরণে সংগঠনসমূহ সব সময় স্বয়ংসম্পূর্ণ নাও হতে পারে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই সংগঠনসমূহকে বাহ্যিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল হতে লক্ষ্য করা যায়। তাই সমন্বয়ের কাজটি যখন একই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ, উপবিভাগ ও কর্মীদের মাঝে সম্পন্ন না হয়ে এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান বা সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে সম্পন্ন হয় তখন তা বিভিন্ন সংস্থার মাঝে সমন্বয় বা বাহ্যিক বহিঃস্থ সমন্বয় হিসাবে পরিচিত লাভ করে। প্রকৃতিগত দিক বিবেচনায় বাহ্যিক সমন্বয়ের আবার দুইটি রূপ পরিলক্ষিত হয়। এগুলো হলো :
১. কার্যগত সমন্বয় ঃ কার্যগত সমন্বয় হলো এমন এক ধরনের বাহ্যিক সমন্বয় যেখানে এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা তাদের কর্মকাণ্ড বা কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
২. ভৌগোলিক সমন্বয় ঃ একটি সমষ্টিতে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় জনগণের প্রয়োজন পূরণে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচিতে নিয়োজিত এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের মাঝে যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয় সেটাকেই ভৌগোলিক সমন্বয় হিসাবে ধরা হয়।
অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমন্বয়কে আবার সমান্তরাল ও উলম্ব এ দু’ভাগে বিবেচনা করা হয়। তবে সমন্বয়ের এই রূপ দুটি মূলতঃ অভ্যন্তরীণ সমন্বয়েরই পর্যায়ভুক্ত।
৩. সমান্তরাল সমন্বয় ঃ এই ধরনের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতা কাঠামোর সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের মাঝে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখা। যেমন ঃ একটি বৃহদাকার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের আওতায় একাধিক কর্মকর্তার পদ থাকতে পারে এবং এ সকল কর্মকর্তার পদ থাকতে পারে এবং এ সকল কর্মকর্তাগণের কর্মকাণ্ডের মাঝে যখন সমন্বয় সাধন করা হয় তখন সেটি হবে সমান্তরাল সমন্বয়।
৪. উলম্ব সমন্বয় ঃ যখন প্রশাসনিক ক্ষমতা কাঠামোর ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির তথা প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানের পৃথক পৃথক স্তরের মাঝে সমন্বয় সাধিত হয় তখন তা উলম্ব সমন্বয় হিসাবে বিবেচিত হয়। যেমন- প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের সাথে উপপরিচালক বা অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের সাথে যে ধরনের সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় সেটি
উলম্ব প্রকৃতির সমন্বয় হিসাবে বিবেচিত।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায়, সমন্বয় হচ্ছে ব্যবস্থাপনার সে পদক্ষেপ যা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি
র বিভিন্ন অংশকে একত্রীকরণের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট পথে চালিত হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ কর্মসূচির পৃথক পৃথক লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত ও সার্বিক লক্ষ্যার্জন করা হয়। তাই এসব লক্ষ্য ও দায়িত্বের মাঝে সমন্বয় একান্ত আবশ্যক।