উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু মননশীল প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী রচিত ‘সংস্কৃতি কথা’ শীর্ষক প্রবন্ধের
প্রসঙ্গ : প্রগতি ও সভ্যতার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করতে গিয়ে প্রাবন্ধিক মন্তব্যটি করেছেন। মন্তব্যটি খুবই মূল্যবান।
বিশ্লেষণ : মানুষ সাধারণ চোখে অনেক সময়ই প্রগতি ও সভ্যতাকে সমার্থক মনে করে। প্রগতি ও সভ্যতার মধ্যে তারা বিশেষ কোন পার্থক্য দেখতে পায় না। কিন্তু একজন কালচার্ড বা সংস্কৃতিবান মানুষ সভ্যতা ও প্রগতিকে কখনই সমার্থক ভাবে না। সংস্কৃতিবান মানুষ প্রগতিকে মোটের উপর একটা জ্ঞানের ব্যাপার বলে মনে করে। কারণ প্রগতি মানে উত্তরোত্তর পরিবর্তন। শুধু জ্ঞানের ক্ষেত্রেই এ প্রগতিশীলতা অবধারিত কিন্তু সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে নয়। তাই জ্ঞান, বিশেষ করে বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান প্রসূত কল্যাণকেই তারা প্রগতি বলে মনে করে। প্রকৃতির উপর মানুষের বিজয় অর্জন করে যে সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়, তার বিতরণকেই তারা প্রগতি ভাবে। কিন্তু সভ্যতা শুধু প্রগতি নয়, সভ্যতা আরো অনেক কিছু। সভ্যতার অপর নাম ‘Creation of life’. প্রগতির সাথে সৌন্দর্য ও প্রেমের সম্বন্ধ স্থাপিত না হলে সভ্যতা হয় না। কিন্তু সৌন্দর্য ও প্রেমের ব্যাপারটা হলো শিল্পের ব্যাপার। কারণ শিল্প হলো সৌন্দর্য ও প্রেমেরই অভিব্যক্তি। শিল্প ও সৌন্দর্য চিরন্তন- তাই অপরিবর্তনশীল। আর এ কারণেই তা প্রগতির বিষয় নয়- তা পুরোপুরি সভ্যতার বিষয়। ফুলের সৌরভ, মায়ের ভালোবাসা, নদীর সৌন্দর্য, শিশুর হাসি প্রভৃতি কখনো নতুন বা পুরাতন হতে পারে না। এ সব চিরন্তন। আর এ চিরন্তনের স্পর্শ না পেলে সভ্যতা সৃষ্টি হয় না। কেননা সভ্যতা মূল্যবোধের ব্যাপার। জীবনে সোনা ফলাতে হলে প্রগতিকে চলতে হবে সভ্যতার হাতে হাত রেখে। আর প্রগতি গড়ে উঠবে প্রেম ও সৌন্দর্যের সাথে সম্বন্ধ স্থাপন করে প্রেম ও সৌন্দর্য ছাড়া প্রগতি যেমন অসম্পূর্ণ তেমনি প্রগতি ছাড়া সভ্যতা গড়ে উঠতে পারে না।
মন্তব্য : প্রগতি ও সভ্যতা পরস্পরের পরিপূরক।