সভ্যতাকে যারা চরিত্র উৎস থেকে উৎসারিতরূপে স্বীকার করেছে, প্রবর্তনায় তারা তাকে কী অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ইংরেজ কর্তৃক ইংরেজ-সভ্যতার মানবিক দিকসমূহকে অবমাননা করার পৈশাচিক কার্যক্রমকে কটাক্ষ করে প্রবন্ধকার উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : ইংরেজ সভ্যতা ছিল উদারতা ও মহত্ত্বের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। এ কারণে এ সভ্যতা পৃথিবীর সমগ্র দেশ ও জাতিকর্তৃক সমাদৃত হয়েছিল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও কৈশোর ও যৌবনে ইংরেজ সভ্যতার আকর্ষণে আকৃষ্ট হয়ে নিজেকে মহিমান্বিত ও সমৃদ্ধ করেছিলেন। তিনি যখন জীবন আরম্ভ করেছিলেন তখন ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে সমগ্র জাতি প্রভাবান্বিত ছিল। তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা, দর্শন, আচার-আচরণ সকলকে মুগ্ধ করেছিল। মানবমৈত্রীর বিশুদ্ধ পরিচয় দেখা গিয়েছিল ইংরেজ-চরিত্রে। তাই আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়ে লেখক ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেন। তখনও সাম্রাজ্য মদমত্ততায় তাদের স্বভাব চরিত্রের দাক্ষিণ্য কলুষিত হয়নি। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে লেখকের মোহভঙ্গ হলো। তখন ছেদ শুরু হলো কঠিন দুঃখে। লেখক প্রত্যহ দেখতে পেলেন সভ্যতাকে যারা চরিত্র উৎস থেকে উৎসারিত রূপে স্বীকার করেছিল, রিপুর তাড়নায় তারা তাকে অনায়াসে লঙ্ঘন করে গেল। তাদের সাম্রাজ্যবাদী হিংস্রতায় মানবমৈত্রীর সে বিশুদ্ধ পরিচয় কর্পূরের মতো উবে গেল। তারা পদে পদে মানবতাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করতে লাগল। বিশ্বব্যাপী তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করার উগ্র মানসিকতার কাছে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদতে শুরু করল। নিজেদের মহত্ত্বকে ইংরেজরা এভাবে অপমানিত করল।
মন্তব্য : ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের যাঁতাকলে ইংরেজদের মহত্ত্ব ও মানবতাবোধ নিষ্পেষিত হয়েছিল।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%95%e0%a6%9f-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%8d/