উৎস : আলোচ্য অংশটুকু সুপ্রাবন্ধিক কাজী আবদুল ওদুদ বিরচিত ‘বাংলার জাগরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ধর্মের সত্যতা বিচারে রামমোহন রায়ের মন্তব্য লেখক এখানে তুলে ধরেছেন।
বিশ্লেষণ : রাজা রামমোহন রায় সনাতন হিন্দুধর্মের পৌত্তলিকতা ও অবতারবাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেননি। তিনি হিন্দু ধর্মসহ অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। এতে ধর্ম সম্পর্কে তাঁর ভিতরে একটি বোধের জন্ম হয়। তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন ব্রাহ্মধর্ম। হিন্দু ধর্মের সংস্কার সাধনে ব্রতী হয়ে তাঁকে বিভিন্ন হিন্দু পণ্ডিতদের তর্কের জবাব দিতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সব ধর্মই কি সত্য এ প্রশ্নের মীমাংসায় রামমোহন বলেছিলেন বিভিন্ন ধর্মের ভিতরে পরস্পরবিরোধী অনেক নিত্যবিধি বর্তমান। তাই সব ধর্মই সত্য এ কথা মানা যায় না, তবে সব ধর্মের ভিতরেই সত্য আছে। দেবেন্দ্রনাথ রামমোহনের এই মীমাংসা মেনে চলেছিলেন বলতে পারা যায় যদিও উপনিষদের দিকে তিনি বেশি ঝুঁকে পড়েছিলেন। কিন্তু কেশবচন্দ্রের ভক্তিপ্রধান মন রামমোহনের এ মতকে মেনে নিতে পারে নি। এ সম্পর্কে মত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন “আমাদের অবস্থান কোন প্রতিষ্ঠিত ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, কেননা পৃথিবীতে সব ধর্মই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।” এ কথাটিকেই রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব আরো সহজ করে বললেন ‘যত মত তত পথ’। এভাবেই ধর্মের ব্যাখ্যায় রামমোহনের মত বিভিন্নভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে।
মন্তব্য : রামমোহনের যুক্তিবাদী মন ধর্মের যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছিল পরবর্তীতে ভক্তিবাদের কাছে তা ম্লান হয়ে গেছে।