সফল স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নেতৃত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পৃথিবীতে মানুষ তার কর্মের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠে মহান; চিরস্মরণীয় ও বরণীয়। এজন্যই উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেছিলেন, “Some are born great, some achieve greatness, some have greatness thrust upon them:” যখন কোনো ব্যক্তি জনগণের প্রত্যাশা বা চাহিদা পূরণে নিজের সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে অবিরত কাজ করে তখন তিনিই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন, পরিণত হন জনগণের নেতায়।
সফল স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব : সফল স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে আলোচনা করা হলো :
১. ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। একজন সফল নেতার নেতৃত্বের যে সমস্ত গুণাবলি থাকা প্রয়োজন তার সবই বঙ্গবন্ধুর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তিনি অযথা ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতেন না বা জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিতেন না। তিনি যা বলতেন তা পূরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন।
২. দূরদর্শিতা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী। তিনি মওলানা ভাসানীর কথায় স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে অত্যন্ত ধীরে, পরিবেশ পরিস্থিতি উপলব্ধি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। যা তাঁর
দূরদর্শিতারই পরিচয় বহন করে।
৩. সাহসী : বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাহসী প্রকৃতির একজন মানুষ। তার প্রমাণ মেলে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে বসবাস করে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং নতুন রাষ্ট্রের দাবি যা তাঁর যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় বহন করে।
৪. ন্যায়পরায়ণ ও নির্লোভ : বঙ্গবন্ধু ছিলেন ন্যায়পরায়ণতার ক্ষেত্রে আপসহীন। তিনি সত্যের ক্ষেত্রে সহজ ন্যায়ানুগ আর মিথ্যার ক্ষেত্রে ছিলেন কঠোর ও কঠিন। তিনি ছিলেন নির্লোভ। ইচ্ছা করলেই তিনি পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ ধনী এবং সর্বাধিক ক্ষমতাশীল হতে পারতেন। পাকিস্তানের গভর্নর বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা হননি। তিনি জনগণের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করেননি।
৫. মানবতার প্রতীক : একজন সফল নেতৃত্বের অন্যতম হচ্ছে তিনি হন মানবতাবাদী। বঙ্গবন্ধু যেখানেই অন্যায়, অবিচার, শোষণ দেখেছেন তার বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এজন্য তাঁকে বার বার শাসকগোষ্ঠীর কড়া শাসনে পড়তে হয়েছে। তার রাজনৈতিক জীবনের অর্ধেক সময়ই তাঁকে জেলে থাকতে হয়েছে। তবুও তিনি ছিলেন অনড়।
৬. জনগণের নেতা : বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা। তিনি জনগণকে আপন সন্তানের মতো ভাবতেন। তাইতো তিনি জনগণকে ‘তুমি’ সম্বোধনে ডাকতেন। জনগণও তাঁকে পিতৃতুল্য ভাবত যার কারণে তারাই তাঁকে ‘জাতির পিতা’ উপাধি দিয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বাংলার জনগণকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে দারুণভাবে জাগিয়ে তোলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেন। বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ
করেন । বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেন স্বাধীনতার মন্ত্রে । বঙ্গবন্ধু পরিণত হন বাঙালির অবিসংবাদিত জননেতায়।