সত্যতা সম্পর্কে রামানুজের মত সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর ।

অথবা, সত্যতা সম্পর্কে রামানুজের মত সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, রামানুজের মতে সত্যতা কী?
অথবা, সত্যতা সম্পর্কে রামানুজের অভিমত কী?
অথবা, রামানুজ সত্যতা সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : মহর্ষি বাদ্রায়ন বেদান্ত দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। বাদরায়ন বেদান্ত দর্শনের যে সূত্রগুলো ব্যাখ্যা করেছেন তা খুবই সংক্ষিপ্ত বলে বিভিন্ন ভাষ্যকর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এ সকল ব্যাখ্যার মধ্যে শঙ্করাচার্য ও রামানুজ প্রদত্ত ব্যাখ্যা প্রাধান্য লাভ করেছে। অন্যান্য মতবাদের ন্যায় জ্ঞানতত্ত্বেও শঙ্করাচার্য ও রামানুজ নিজস্ব স্বকীয়তা দিয়ে আলোচনা
করেছেন। রামানুজ তাঁর জ্ঞানতত্ত্বে তিনটি উৎসের কথা বলেছেন। যথা : (ক) প্রমাণ; (খ) সত্যতা এবং (গ) ভ্রম।
সত্যতা : রামানুজ বলেন, আমাদের সব জ্ঞানই সব বস্তুর জ্ঞান। তবে সাধারণত আমাদের জ্ঞান আংশিক ও অপূর্ণ হয়। যেমন- রজ্জুতে যখন সর্প ভ্রম করে তখন রজ্জুতে সর্পের কোন কোন বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করে, যদিও সর্পের সব বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করে না। রামানুজ সম্প্রদায়ের মতে, যে জ্ঞান ব্যবহারের উপযোগী নয় তাকে প্রমা বা যথার্থ জ্ঞান বলা যায় না। যে বস্তু যেমন তাকে সেভাবে জানাই হলো সত্য জ্ঞান। আর একটি বস্তুকে ভিন্ন বস্তুরূপে জানাই মিথ্যা জ্ঞান। যেমন- রজ্জুকে যখন রজ্জু বলে জানি তখন জ্ঞান সত্য হয়, কিন্তু রজ্জুকে যখন সৰ্প বলে জানি, তখন সে জ্ঞান মিথ্যা হয়। সত্য জ্ঞান প্রয়োজন সিদ্ধ করতে পারে, কিন্তু ভ্রান্ত জ্ঞান তা পারে না। যেমন- মরীচিকায় যে জল প্রত্যক্ষ করি সে জলের দ্বারা পিপাসার নিবৃত্তি হয় না। রামানুজ বলেছেন, সব জ্ঞান সদ্বম্ভর জ্ঞান হলেও ব্যবহারিক জগতে জ্ঞান অপূর্ণ থাকে। একমাত্র মোক্ষ লাভের পর জীবের জ্ঞান পূর্ণ হয়। ঐ জ্ঞানই জ্ঞানের চরম স্তর এবং তা ব্রহ্ম সাক্ষাৎকার ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শঙ্কর ও রামানুজ বেদান্ত দর্শনের ভাষ্যকার হিসেবে যে তত্ত্ব দিয়েছেন তা অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য। তবে দু’জনের জ্ঞানতত্ত্বের মধ্যে বর্ণনাগত প্রভেদ যেমন আছে তেমন সাদৃশ্য বা মিলও আছে। তাইতো বেদান্ত দর্শনের জ্ঞানতত্ত্ব দর্শনের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।