অথবা, সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও।
অথবা, সংস্কৃতি কাকে বলে?
অথবা, সংস্কৃতি বলতে কী বুঝ?
অথবা, কালচার কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক বিজ্ঞানের আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান সংস্কৃতি, যা মানবসমাজকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় উন্নীত করেছে। এ প্রসঙ্গে B. Malinowski বলেন, “মানুষের বড় অর্জনই হলো সংস্কৃতি যা প্রাণী হিসেবে উৎকৃষ্টতা অর্জন করেছে।”
সংস্কৃতি : ইংরেজি Culture শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ সংস্কৃতি। ল্যাটিন শব্দ ‘Colere’ থেকে এ শব্দের উৎপত্তি। ইংরেজি সাহিত্যে এ শব্দটি ষোল শতকের শেষার্ধে প্রথম ব্যবহার করেন ফ্রান্সিস বেকন। সংস্কৃতি বলতে সাধারণ মানুষের জীবনাচরণকে বুঝায়। অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায়, “সমাজ আকাঙ্ক্ষিত ধারায় জীবনযাপন করতে গিয়ে মানুষ যা
সৃষ্টি করে বা আয়ত্ত করে সেসবের সামগ্রিকতাকে সংস্কৃতি বলে ।”
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : সমাজবিজ্ঞানী জোনস এর মতে, “মানবসৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি সমাজবিজ্ঞানী রস এর মতে, “সকল বস্তু ও অবস্তুর কৌশল হচ্ছে সংস্কৃতি।” ম্যাকাইভারের মতে, “আমরা মানুষ হিসেবে কি, সে হলো আমাদের সংস্কৃতি।” ম্যালিনোস্কি’র মতে, “সংস্কৃতি মানুষেরই সৃষ্ট, যার মাধ্যমে সে নিজের উদ্দেশ্য সাধন করে ।” সংস্কৃতির বহুল ‘Primitive Culture’ আলোচিত সংজ্ঞাটি প্রদান করেছেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ সামাজিক নৃবিজ্ঞানী ই.বি. টেইলর। তাঁর গ্রন্থে তিনি বলেছেন, “জ্ঞানবিজ্ঞান, আচার বিশ্বাস, শিল্পকল্পা, নীতিবোধ, আইনকানুন এবং অনুশীলন ও অভ্যাস যেসব মানুষ কোন এক সমাজের পরিবেশে আয়ত্ত করে সেসবের সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি। আবার অনেক সমাজবিজ্ঞানী এবং নৃবিজ্ঞানীদের মতে, “মানুষের সৃজনশীল সৃষ্টিই সংস্কৃতি।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায়, মানুষের সামগ্রিক জীবনধারাই হলো সংস্কৃতি। এটি হলো সমাজ ও সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের অজস্র বিষয়ের এক জটিল ও মিশ্র রূপ, যার মধ্যে রয়েছে সমাজের সমষ্টিগত জ্ঞান, নীতিবোধ, বিশ্বাস, আইন, কলা, প্রথা ইত্যাদি এবং সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের যে কোন বিষয়ে অর্জিত দক্ষতা ও অভ্যাস।