সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলতে কী বুঝ?

অথবা, সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
যে কোনো সমাজব্যবস্থার অগ্রগতি ও কল্যাণের অন্যতম মূল হচ্ছে সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা। প্রত্যেক সমাজব্যবস্থায় সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বিদ্যমান। সমাজব্যবস্থায় যে বৈচিত্র্য ও সমন্বয় তা গড়ে উঠতে সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা সংস্কৃতি মানুষের জীবন প্রণালিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা : সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা হলো বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে খাপ খাইয়ে সাংঘর্ষিক পথে না গিয়ে এসব সংস্কৃতিকে মেনে নিয়ে এমনভাবে বসবাস করা যাতে মানুষে-মানুষে, সমাজে-সমাজে এবং জাতিতে- জাতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকে। ভারতবর্ষের মাটিতে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক এবং ভাষাগোষ্ঠীর লোকদের মিশ্রণের ফলে
যেসব সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা। এ সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা: i. সাংস্কৃতিক সাঙ্গীকরণ ও ii. সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ। যখন একটি দল অন্য একটি দলের সান্নিধ্যে আসার পর ঐ দল থেকে সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ গ্রহণ করে নিজ দলের সাথে সঙ্গীকৃত করে নেয় এবং সেভাবে নিজ দলের সংস্কৃতিতে রূপান্তর ঘটায় তখন সাংস্কৃতিক সাঙ্গীকরণ সাধিত হয়। অন্যদিকে, সাংস্কৃতিক আত্তীকরণ প্রক্রিয়ায় এক সংস্কৃতির ব্যক্তিবর্গ অথবা দল বিশেষ অন্য সংস্কৃতির ব্যক্তিবর্গ বা দলের সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণ গ্রহণ করে থাকে। এভাবে অন্যদলের আচার আচরণ, মূল্যবোধ, জীবনধারা, প্রণালি ইত্যাদি গ্রহণ করে তারা সে দলের মধ্যে সম্পূর্ণ মিশে যায়। এক সংস্কৃতির সাথে অন্য সংস্কৃতির এ মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়াকেই মূলত সংস্কৃতির সমন্বয়বাদিতা বলা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ধারণ করা মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক সময়বাদিতা অপরিহার্য। যে সমাজে মানুষে-মানুষে হানাহানি ও দ্বন্দ্ব বিরাজ করে, সে সমাজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আর সমাজের এ রকম কলহপূর্ণ ও অস্থিতিশীল চিত্র নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়।