সংসদীয় সরকারের সাথে অন্যান্য সরকারের একটি তুলনামূলক আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, সংসদীয় সরকারের সাথে অন্যান্য সরকারের পার্থক্য আলোচনা কর।
অথবা , সংসদীয় সরকারের সাথে অন্যান্য সরকারের বৈপরীত্য আলোচনা কর।

উত্তর: ভূমিকা : সরকারের শ্রেণিকরণ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকার এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার এ দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। এ দু’শ্রেণির মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিশ্বের প্রায় অনেক দেশে প্রচলিত রয়েছে। এ সম্পর্কে অধ্যাপক অ্যাপলবি বলেছেন, “Parliamentary government is decidedly better than any other government” এ বিষয়ে পর্যালোচনা করার পূর্বে আমাদের সংসদীয় সরকারের সংজ্ঞা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। সংসদীয় সরকারের সাথে অন্যান্য সরকারের তুলনা : সংসদীয় সরকারের সাথে অন্যান্য সরকারেরতুলনা নিয়ে আলোচনা করা হলো :

১. রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের সাথে : রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি প্রযোজ্য হওয়ায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন। এ শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ আইন পরিষদের নিকট দায়ী থাকে না। ফলে মন্ত্রিপরিষদ ও রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে। অপরপক্ষে, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকার ফলে আইন বিভাগ প্রণীত আইনগুলোকে শাসন বিভাগ যথাযথভাবে কার্যকরী করে। এ শাসনব্যবস্থায় যেহেতু শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিকট দায়ী থাকে সেহেতু মন্ত্রিপরিষদ ও রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না।

২. একনায়কতন্ত্রের সাথে তুলনা : একনায়কতন্ত্রে যেহেতু একজন ব্যক্তিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেহেতু তিনি যথেচ্ছা শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারেন। এতে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে না। একনায়কতন্ত্র সাম্য ও স্বাধীনতার নীতিতে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু সংসদীয় সরকার সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার নীতিতে বিশ্বাসী। এতে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটে। এদিক থেকে বিচার করলে সংসদীয় সরকার নিঃসন্দেহে উত্তম ও প্রশংসনীয়

৩. রাজতন্ত্রের সাথে তুলনা : রাজতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা যা কোন কোন ক্ষেত্রে রাজা বা রানী হিসেবে বিশেষ কোন ব্যক্তি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সে বিশেষ ব্যক্তি উত্তরাধিকারসূত্রে রাজা বা রানী নির্বাচিত হন। কার্যত তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ইচ্ছা করলেই একনায়কের মতো শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারেন। অপরদিকে, সংসদীয় সরকারকে একটি সীমিত গণ্ডির মধ্য থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়। ফলে তিনি স্বৈরাচারী বা স্বেচ্ছাচারী হতে পারেন না। কাজেই এটি জনগণের জন্য কল্যাণকর।

উপসংহার: উপযুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সংসদীয় সরকারের সংজ্ঞা, এর গুণাবলি এবং সংসদীয় সরকারের সাথে অন্যান্য সরকার ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, সংসদীয় সরকারের এমন কতকগুলো গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোন সরকার ব্যবস্থায় নেই। এ সরকার ব্যবস্থা সবসময় জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত থাকে এবং এটি সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার নীতিতে বিশ্বাসী। সুতরাং অধ্যাপক অ্যাপলবির উকি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, “সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা অন্যান্য সরকার ব্যবস্থা থেকে উত্তম।”