অথবা, সহসম্পর্কের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ তুলে ধর।
অথবা, সহসম্বন্ধ কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
অথবা, সংশ্লেষণের ধরনসমূহ উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে সংশ্লেষণ বা Correlation অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যানিক অনুসন্ধানের যেসব ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের প্রকৃতি ও মাত্রা নির্ণয়ের প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে সংশ্লেষণ ব্যবহার করা হয়। যদি কতকগুলো চলক এমন হয় যে, যাদের একটির মান পরিবর্তিত হলে অপরটির মানও পরিবর্তিত হয় তবে সেক্ষেত্রে চলকগুলোকে Correlation বলা হয়। এর মাধ্যমে চলকগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক
নির্ণয় করা হয় । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
সংশ্লেষের প্রকারভেদ : সাধারণ সংশ্লেষকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি । যথা :
১. সহজ সংশ্লেষক বা Simple Correlation,
২. বহুধা সংশ্লেষক বা Multiple Correlation
৩. আংশিক সংশ্লেষক বা Partial Correlation.
নিম্নে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. সহজ সংশ্লেষ : কোন দ্বি-দৈব পরিমিত সমগ্রক হতে নেওয়া দুটি চলক যদি একই সাথে পরিবর্তিত হয়, অন্য কথায় যে চলক দুটির মধ্যে কোনরূপ সম্পর্ক আছে। দুটি চলকের পরিবর্তনের প্রকৃতি একইরূপ বা ভিন্নরূপ হতে পারে দুটি চলকের মধ্যে বিদ্যমান এ সম্পর্ককে একই সাথে পরিবর্তন হওয়ার প্রবণতাকে সহজ সংশ্লেষক বা Simple Correlation বলে। যেমন- ধানের ফলন (y) সারের ব্যবহার (x) এতদুপায়ের মধ্যকার সম্পর্ককে সহজ সংশ্লেষক
বলে । সহজ সংশ্লেষকে আবার নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
ক. সহযোগী সংশ্লেষক : যদি দুটি চলক এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত হয় যে, তাদের মানের পরিবর্তনের হার সমান না হয়, তবে একটি চলকের মানের বৃদ্ধিতে অপর চলকের মানের কিছু না কিছু বৃদ্ধি ঘটে। এরূপ চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষাঙ্ক (r) ০ হতে ১ এর মধ্যবর্তী হয়।
খ. পূর্ণ সহযোগী সংশ্লেষ : যদি দুটি চলক এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত হয় যে, তাদের মানের পরিবর্তনের হার সমান এবং
দিক সমমুখী, তবে তাদের মধ্যকার সংশ্লেষক পূর্ণ সহযোগী সংশ্লেষক বলে ।
গ. অসহযোগী সংশ্লেষক : যদি দুটি চলকের মানের পরিবর্তনের দিক বিপরীত হয় এবং হার অসমান হয়, তবে তাদের মধ্যকার সংশ্লেষকে অসহযোগী সংশ্লেষক বলে ।
ঘ. পূর্ণ অসহযোগী সংশ্লেষক : যদি দুটি চলক এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত হয় যে, একটির পরিবর্তনের হার অন্যটির পরিবর্তনের হারের সমান কিন্তু পরিবর্তনের দিক একটি অপরটির বিপরীত তখন চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষকে পূর্ণ অসহযোগী সংশ্লেষক বলে । এক্ষেত্রে r = 1 হয়। যদি x ও y চলকদ্বয় ax+by+c = 0 এ সমীকরণ দ্বারা সম্পর্কযুক্ত হয় এবং a ও b একই চিহ্নিতবিশিষ্ট ধ্রুবক হয়, তবে চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষকে পূর্ণ অসহযোগী বা পূর্ণ ঋণাত্মক সংশ্লেষক বলা হয় ।
ঙ. শূন্য সংশ্লেষ : যদি একটি চলকের পরিবর্তন অন্যটির উপর কোন প্রকার প্রভাব ফেলতে না পারে তবে তাদের মধ্যে সংশ্লেষ নেই বলে বিবেচিত হয়। শূন্য সংশ্লেষের ক্ষেত্রে একটি চলকের পরিবর্তনে অপর চলকের পরিবর্তন সমমুখী না বিপরীতমুখী তা বুঝা যায় না ।
২. বহুধা সংশ্লেষ : যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো চলকের কোন একটি চলকের উপর অন্য সব চলকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তবে সে নির্দিষ্ট চলক ও ঐ একদল চলকের যে সম্পর্ক পাওয়া যায় তই বহুধা সংশ্লেষ । যেমন- ধানের ফলন (y) কতকগুলো স্বাধীন চলক (যেমন-সার (x’), পানি সরবরাহ (x2), কীটনাশক (x’) ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয় । এখানে ধানের ফলনের সাথে অন্যান্য উপকরণের মধ্যে যে সম্পর্ক তাই বহুধা সংশ্লেষ ।
৩. আংশিক সংশ্লেষ : যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো চলকের মধ্যে একটি অধীন চলকের উপর অন্যসব চলকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তবে স্বাধীন চলকগুলোর মধ্যে হতে একটি নির্দিষ্ট চলক ও ঐ অধীন চলকের মধ্যে যে সম্পর
্ক পাওয়া যায় তাকে আংশিক সংশ্লেষ বলে। যেমন- ধানের ফলন (y) কতকগুলো স্বাধীন চলক (x’), (x2), (x) ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবতি হয়। ধানের ফলন ও অন্যান্য উপাদানের মধ্যে এ সম্পর্ককে আংশিক সংশ্লেষ বলে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, সংশ্লেষ পরিসংখ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । এর মাধ্যমে দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় যা পরিসংখ্যানে অত্যন্ত কার্যকরী। এ সংশ্লেষ আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক ।