অথবা, সংশোধনমূলক কার্যক্রমের ধরনসমূহ কি কি? বাংলাদেশে সংশোধনমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, সংশোধনমূলক কার্যক্রম কত প্রকার ও কি কি? বাংলাদেশে সংশোধনমূলক ব্যবস্থার তাৎপর্যসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, সংশোধনমূলক কার্যক্রমের শ্রেণিবিভাগ তুলে ধর। বাংলাদেশে সংশোধনমূলক ব্যবস্থায় সমাজকর্মের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : বাংলাদেশে অপরাধী ও কিশোর অপরাধীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই সামাজিক সমস্যা তথা অপরাধমূলক কার্যক্রম দূর করতে হলে সংশোধনমূলক কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিতে হবে। অপরাধীকে শাস্তির পরিবর্তে সংশোধনের ব্যবস্থা করা বিজ্ঞানসম্মত কাজ।এক্ষেত্রে সমাজকর্মী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সংশোধনমূলক কার্যক্রমের শ্রেণিবিভাগ :
সংশোধনমূলক কার্যক্রমকে প্রধানত সাতটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা :
১. প্রবেশন
২. প্যারোল,
৩. মুক্ত কয়েদি পুনর্বাসন,
৪. আটক নিবাস বা রিমান্ড হোম,
৫. রোবস্টাল স্কুল,
৬. কিশোর আদালত ও
৭. ট্রেনিং স্কুল ।
বাংলাদেশে সংশোধনমূলক ব্যবস্থার গুরুত্ব/সমাজকর্মীর ভূমিকা
নিম্নে বাংলাদেশে সংশোধন ব্যবস্থার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :
১. অপরাধপ্রবণতা হ্রাস : অপরাধীকে সংশোধনের সুযোগ দেয়ার ফলে সমাজে অপরাধের পরিমাণ অনেক হ্রাস পায়। কেননা, ব্যক্তি তখন অপরাধ করার চেয়ে স্বাভাবিক জীবনকে শ্রেয় মনে করে সামাজিক সমস্যাও তখন অনেকাংশে কমে যায়।
২. অর্থের অপচয় রোধ : অপরাধীকে সংশোধনের মাধ্যমে পুনর্বাসিত করলে সরকারি প্রশাসনের প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হয়।কেননা অপরাধী স্বাভাবিক জীবনে চলে যাওয়ার ফলে কারা প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও অপরাধীদের ভরণপোষণ বাবদ অনেক অর্থ বেঁচে যায়।
৩. বিপথগামিতা থেকে রক্ষা : বর্তমানে নেতিবাচক পরিবেশের প্রভাবে তরুণ ও যুবসমাজ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।অথচ এই যুবসমাজ জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাই বিপথগামিতা রোধ করার জন্য সংশোধনমূলক কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম।
৪. মানসিক অবস্থার উন্নয়ন : অপরাধীকে সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সংশোধনই একমাত্র পথ। কেননা অপরাধী সমাজের চোখে ঘৃণার পাত্র। ফলে মানসিক দিক দিয়ে সে বিপর্যস্ত থাকে। শাস্তি দিলে অপরাধী আরো অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে।এক্ষেত্রে সংশোধনের মাধ্যমে তার মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
৫. অপরাধের ধরন জানা : অপরাধের ধরন জানা থাকলে অপরাধীকে সংশোধনের সুযোগ করে দেয়া যায়।সংশোধন পদ্ধতিতে অপরাধের কারণ, পরিবেশ পরিস্থিতি, অপরাধীর চরিত্র প্রভৃতি সম্পর্কে বিশ্লেষণের সুযোগ থাকে। ফলে অপরাধী সংশোধনের মাধ্যমে পুনর্বাসনের সুযোগ পায়।
৬. পৃথক ব্যবস্থায় বিচার : সংশোধন পদ্ধতিতে কিশোর অপরাধীদের পৃথক ব্যবস্থায় বিচার কার্যসম্পন্ন করা হয়।সে দাগি ও বড় অপরাধীদের ছোঁয়া থেকে রক্ষা পায়। ফলে অপরাধীর চরিত্র সংশোধন করা সহজ হয়।
৭. সচেতন নাগরিক সৃষ্টি : সংশোধনমূলক পদ্ধতিতে অপরাধীর চরিত্রের পরিবর্তন হয় এবং দায়িত্বশীল ও সচেতন নাগরিক হিসেবে সে নিজেকে গড়তে সক্ষম হয়। তাই দায়িত্বশীল ও উৎপাদনশীল নাগরিক সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশোধনমূলক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৮. পারিবারিক ভাঙন রোধ : অপরাধীকে শাস্তি দিলে তার পরিবার তীব্র সমস্যার সম্মুখীন হয়। অর্থাৎ আর্থসামাজিক নানা সমস্যায় পতিত হয়। সংশোধনমূলক পদ্ধতি পরিবারের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক রাখে।
৯. মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ : সংশোধনমূলক পদ্ধতিতে অপরাধী তার মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে।শর্তসাপেক্ষে সমাজে পুনর
্বাসনের মাধ্যমে সে সহজেই সমাজে নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে সক্ষম হয়।
১০. সামাজিক অনাচার রোধ : অপরাধীকে সংশোধন করার সুযোগ দিলে সে স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা হ্রাস পায়।তাই সামাজিক অনাচার ও বিশৃঙ্খলা দূর করার ক্ষেত্রে সংশোধনমূলক কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
১১. সামাজিক সমস্যার সমাধান : অপরাধীকে শাস্তি দিলে অপরাধী পুনরায় প্রতিশোধের স্পৃহায় অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ফলে সমাজে সমস্যা আরো বেড়ে যায়।অথচ সংশোধনের সুযোগ দিলে সামাজিক সমস্যা অনেকাংশেই হ্রাস পায়।
১২. সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ : অপরাধী চরিত্র সংশোধনের সুযোগ পেলে তার সুপ্ত প্রতিভা ও ক্ষমতার বিকাশ ঘটে থাকে। তাই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার চেয়ে সংশোধনমূলক কার্যক্রম অপরাধীর মানসিক বিকাশে যথেষ্ট সহায়ক।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, অপরাধী সংশোধনরত অবস্থায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এ অবস্থায় তাকে সমাজে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়ার ফলে সে সহজেই আয়-রোজগারের পথ খুঁজে পায়। ফলে সংশোধিত ব্যক্তি স্বাবলম্বী হয়ে উঠে।