সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষার উপায় আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা,কীভাবে সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।
অথবা,সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার কৌশল উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমিকা : সংবিধান হলো বিশ্বের সকল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে অপরিহার্য একটি দলিল। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান থাকে। রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে, কোন বিভাগের সঙ্গে কোন বিভাগের কি সম্পর্ক থাকবে, জনগণ কি অধিকার ভোগ এবং কি কর্তব্য পালন করবে তা সংবিধানের মধ্যে সন্নিবেশিত থাকে। সংবিধান রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার কাঠামোর রূপরেখা অঙ্কিত করে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে সার্থক করে গড়ে তোলে। সংবিধান হচ্ছে সকল ধরনের সরকারের উৎস। তাই সংবিধান শুধুমাত্র প্রণয়ন করলেই চলবে না, সাথে সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এটি সর্বজনকর্তৃক গৃহীত হয়। অর্থাৎ প্রণীত সংবিধানের প্রাধান্য যাতে বজায় থাকে। যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ।

সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার উপায় নিম্নে সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার উপায় রয়েছে:

১. লিখিত সংবিধান সংবিধান লিখতে হবে। জনগণ লিখিত বিধানগুলি প্রয়োজনীয় যাতে তারা তাদের ক্ষমতা এবং অধিকার সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত হয়। মানুষ অলিখিত আইনের মতো লিখিত আইন অমান্য করতে পারে না।

২. বিচার বিভাগের প্রাধান্য সংবিধানের আধিপত্য রক্ষায় বিচার বিভাগের আধিপত্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দেশের কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকার শাসন ব্যবস্থাকে ক্ষুন্ন করে এমন কোনো কাজ করলে তার বৈধতা যাচাইয়ের জন্য বিচার বিভাগের শরণাপন্ন হওয়ার জন্য আইন থাকা প্রয়োজন। যদি কোন প্রাধান্য না থাকে, তাহলে বিচার বিভাগ এর বৈধতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে না।

৩. সচেতন জনমত:সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার জন্য সচেতন জনমত একান্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জনমতই সবচেয়ে বড় শক্তি। কে.সি. “সংবিধান আসলে জনগণের দ্বারা লিখিত, তাই সবকিছু তাদের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করবে,” হোয়ার বলেছিলেন।

৪. ব্যবহারিক প্রয়োগ: সংবিধান শুধুমাত্র লিখিতভাবে ঢোকানো হয় না, এর ব্যবহারিক প্রয়োগ প্রয়োজন। অধ্যাপক ল্যাঙ্কি বলেন, “কাগজে লেখা প্রবিধান কখনই অধিকার সংরক্ষণ করতে পারে না।” তাই শেষ পর্যন্ত সাংবিধানিক আইন বাস্তবায়নই বাঞ্ছনীয়।

৫. শিক্ষা: সংবিধানের আধিপত্য রক্ষায় দেশের সাধারণ শিক্ষা ও ব্যবস্থাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনসাধারণ শিক্ষিত না হলে সংবিধানের আধিপত্যের প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে পারবে না। জিন রেঞ্জেল বলেন, “সংবিধানের বাস্তবতা বোঝার জন্য শিক্ষা প্রয়োজন।”

৬. সংশোধনের উপায়: সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতিকে জটিল বা অনমনীয় করে এর প্রাধান্য রক্ষা করা যায়। যদি পরিবর্তনের বিধান একটি জটিল পদ্ধতি হয়, তবে কেউ সহজে বা সামান্য কারণে পরিবর্তন করতে চলে না।

৭. রাজনৈতিক দল : “Party is perhaps the most important influence upon the working of the constitutions ” . Wheare. দেশের সুগঠিত রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক প্রাধান্য রক্ষায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল না থাকলে প্রাধান্য রক্ষিত হবে না।

৮. আইনসভার প্রাধান্য অনেক ক্ষেত্রে আইনসভার প্রাধান্য ও সাংবিধানিক প্রাধান্য রক্ষা করে। দেশের সকল প্রকার আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আইনসভার। সংবিধান প্রণয়ন, সংশোধন ও পরিবর্তনের মূল অধিকার আইনসভার। আইনসূতা সংবিধানের বিধিবিধান যথার্থ প্রয়োগের ব্যবস্থা না করলে প্রাধান্য রক্ষিত হতে পারে না।

৯. বৈধ সরকার : সরকার বৈধ না হলে সংবিধানের মানকে সমুন্নত রাখতে পারে না। বৈধ সরকার সর্বদা সংবিধানের প্রাধান্য র জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। আর অবৈধ পথে আগত সরকার সাংবিধানিক সরকারের শত্রু এবং এদের দ্বারাপ্রধান রক্ষিত হয় না।

১০. পণউদ্যোগ ও শণনির্দেশ : গণউদ্যোগ ও গণনির্দেশের দ্বারা সংবিধান প্রণয়ন, পরিবর্তন ও সংশোধন করা হয়। তাই গণউদ্যোগ ও গণনির্দেশের মাধ্যমেও অনেক সময় সাংবিধানিক প্রাধান্য বজায় থাকে। বিশেষত সুইজারল্যান্ডে এ পদ্ধতি চালু রয়েছে।

১১. জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা : জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা সাংবিধানিক প্রাধান্য রক্ষার অন্যতম উপায়। সাংবিধানিক প্রাধান্য রক্ষার জন্য জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। কেননা জনগণ তাদের অধিকার ও কর্তবো সজাগ না হলে প্রাধান্য রক্ষিত হতে পারে না। উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংবিধান হলো একটি রাষ্ট্রের জন্য আবশ্যক এবং মৌলিক বিধান। জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার কথা শুধু সংবিধানে লিখিত থাকলেই হবে না, এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সাংবিধানিক প্রাধান্য না থাকলে সে সংবিধান না থাকারই সমতুল্য। সুতরাং সরকার ও জনগণের উচিত সংবিধান মান্য করা ও সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।