সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধির বিভিন্ন দিক আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধির দিকসমূহ তুলে ধর।

উত্তর: ভূমিকা: প্রতিটি রাজ্যের একটি সংবিধান আছে। সংবিধান যে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধান চালিকাশক্তি। এটি প্রতিটি রাজ্যের জন্য অপরিহার্য। সংবিধান ছাড়া রাষ্ট্র ক্যাপ্টেন ছাড়া জাহাজের মতো। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল থেকে শুরু করে অনেক চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সংবিধানকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
এসব সংজ্ঞা থেকে সংবিধানের সঠিক প্রকৃতি ও রূপ বোঝা যায়।সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধির বিভিন্ন দিক: প্রকৃতপক্ষে, আধুনিক সময়ে সংবিধানের প্রকৃতির বিশ্লেষণ

১. রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রের মৌলিক ক্ষমতা কাঠামো এবং এর উদ্দেশ্য এবং বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে নির্ধারণ করা। সরকারি যন্ত্রের এটি করতে, এর কিছু দিক মাথায় আসে। যথা একটি ভাল সংবিধানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল বিদ্যমান ক্ষমতার সঠিক বর্ণনা প্রদান করা।

২. মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক নির্দেশ করা: রাষ্ট্রের আইন বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, বিচার বিভাগ,নির্বাচন কমিশন, নির্বাচকমণ্ডলী, রাজনৈতিক দলের প্রকৃতি মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মিথস্ক্রিয়া বা সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করে।

৩. গণতান্ত্রিক অধিকার: রাষ্ট্রের জনগণের অধিকার বা নাগরিক হিসাবে গণতান্ত্রিক অধিকার ও কর্তব্য সংবিধান ধারণ করে। এটাও সংবিধানের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।

৪. স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণ সংবিধান সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিরোধ করে জনগণের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয় এবং সংবিধান সরকারের একটি বিভাগকে অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করতে বাধা দেয়। আর সংবিধানের উদ্দেশ্য হলো এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

৫. বৈদেশিক বিষয়: বহিরাগত এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অবস্থান এবং কৌশল হল সংবিধান নির্ধারণ করে এভাবে, একাধিক উদ্দেশ্য নিয়ে সংবিধান প্রণীত হয়।

৬. রাষ্ট্রের চরিত্রের বিশ্লেষণ: অ্যারিস্টটলের মতে, “সংবিধান হল রাষ্ট্রের জীবন পদ্ধতি, যা রাষ্ট্র নিজের জন্য বেছে নেয়।” প্রতিটি রাষ্ট্রের সংবিধান নির্ভর করে রাষ্ট্রের প্রকৃতি অর্থাৎ রাষ্ট্রের চরিত্রের উপর। একটি রাষ্ট্রের চরিত্র সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায়।

৬.রাষ্ট্রের চরিত্র বিশ্লেষণ: এরিস্টটলের মতে,“সংবিধান হলো রাষ্ট্রের জীবন পদ্ধতি, যা রাষ্ট্র নিজের জন্য বেছে নেয়।” প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের সংবিধান রাষ্ট্রের প্রকৃতি অর্থাৎ রাষ্ট্রের চরিত্রের উপর নির্ভর করে। একটি রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন সে সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা লাভ করা যায়।

৭. আইন সম্পর্কে ধারণা : আইনের বিভিন্ন বিধিবিধানের উপর নির্ভর করে সংবিধান প্রণীত হয়। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতিফলন ঘটে সংবিধানের মাধ্যমে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Ogg এবং Link এর মতে, “শাসনতন্ত্র হলো বিশেষভাবে পবিত্র সেসব মৌলিক আইন যাদের যারা শাসনব্যবস্থার কাঠামো স্থিরীকৃত হয়। “

৮. মৌলিক আইনের সমষ্টি : সংবিধান নির্দিষ্ট প্রশাসনিক ও প্রয়োজনীয় মৌলিক বিধিবিধানের সমষ্টি। এজন্য সংবিধান হচ্ছে সকল মৌলিক আইনের নিয়ামক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বুলির ভাষায়, “সংবিধান হলো সরকারের গঠনতন্ত্র সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের অস্তিত্ব ও সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ সংক্রান্ত মৌলিক আইনের সমষ্টি।”

৯. সুবিন্যন্ত : সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটি সর্বদা সুবিন্যস্ত। বিশেষ করে লিখিত সংবিধান আরো বেশি কাঠামোভিত্তিক। সংবিধানে সরকারের মূল কাঠামো ও গঠন স্থির করা হয়।

১০. সংশোধনযোগ্য : সংশোধনযোগ্যতা সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কারণ প্রয়োজনে প্রত্যেকটি সংবিধান সংশোধন করা যায়। সংশোধন পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

১১. বাধ্যবাধকতা : প্রত্যেকটি দেশের সরকার সেদেশের সংবিধান মেনে চলতে বাধ্য থাকে। সংবিধানের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এটি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। সংবিধানের মাধ্যমে সরকারের বিধিবিধান কার্যকর হয়।

১২. সার্বভৌমত্বের প্রতীক : সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এজন্য সদ্য স্বাধীন একটি সংবিধান প্রণয়ন করে। Prof. Lewis বলেন, The term constitution signifies the arrangement and distribution of the sovereign power is the community or form of government.”

“অন্যদিকে, সংবিধানের বিষয়বস্তু বা পরিধির ব্যাপারে রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে সাধারণভাবে একটি সংবিধানের বিষয়বস্তু বা পরিধি হিসেবে যা থাকে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এক মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যসীমা নিয়ন্ত্রণ ভারসাম্য প্রশাধন পদ্ধতির কথা, সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা, রাষ্ট্রের কি বিষয়াদির মূলনীতি, স্থানীয় প্রজাং, বৈদেশিক বাণিজ্য, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ রোধ, সুবিচার নিশ্চিতকরণ, সরকারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ প্রভৃতি কে দিকনির্দেশনা প্রদান প্রভৃতি।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে একথা বলা যায় যে, কোন রাষ্ট্রের সংবিধানের উদ্দেশ্যের উপরই নির্ভর করে এর বিষয়বস্তু বা পরিধি। বস্তুত একটি সংবিধানে রাষ্ট্রের মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুষ্ঠুভাবে সন্নিবেশিত করা হয়। সমাজে বিরাজমান ক্ষমতা সম্পৰ্কে প্ৰতিচ্ছবি সংবিধানে বিকৃত হয় এবং এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।