সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধি আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

উত্তর: ভূমিকা : প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই একটি সংবিধান থাকে। সংবিধানই হচ্ছে কোন রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধান চালিকাশক্তি। ভূত্যেক রাষ্ট্রের জন্যই এটা অপরিহার্য। সংবিধানবিহীন রাষ্ট্র কর্ণধারবিহীন জাহাজের সঙ্গে তুলনীয়। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল হতে শুরু করে অদ্যাবধি বহু চিন্তাবিদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংবিধানের সংজ্ঞা দিয়েছেন।এসব সংজ্ঞা হতে সংবিধানের যথার্থ প্রকৃতি ও স্বরূপ অনুধাবন করা যায়। সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধি : যে কোন ধরনের সরকারের উৎস হচ্ছে তার সংবিধান। বস্তুত যে কোন ধরনের সরকারের পথ নির্দেশকই হচ্ছে এর সংবিধান, যা সরকারের মৌলিক বিষয়াদির সাথে সংশ্লিষ্ট সময় বিধিবিধানকেই অন্তর্ভুক্ত করে। Prol, Finer তাঁর The Theory and Practice of Modem Government’ গ্রন্থে সংবিধানের প্রকৃতি সম্পর্কে বলেছেন, “মৌল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সুষম ব্যবস্থাই সংবিধান।” (The system of fundamental political institutions is the constitution). Finer এর উক্তি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করলে সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে গুটি বিষয় খুঁজে পাই। যথা :

i.সুখম ব্যবস্থা (System) এবং

ii. মৌল বিধানাবলি (Fundamentals)।

i. সুষম ব্যবস্থা : সুষম ব্যবস্থা কথাটির প্রসঙ্গে Prof. Finer এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বিভিন্ন মৌল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান পরস্পরের সাথে অপরিহার্যভাবেই সম্পর্কযুক্ত এবং এগুলো যে সমাজে প্রচলিত রয়েছে, সে সমাজের প্রকৃতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্বন্ধযুক্ত। একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে অধ্যয়ন করতে হবে। কারণ এদের সম্পর্কের দিক হতে বলতে গেলে প্রত্যেক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানেই একে অপরকে তাৎপর্য প্রদান করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচকমণ্ডলী, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি কোন সামগুলো না আসা পর্যন্ত পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করে যেতে বাধ্য হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আইনসভার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে নির্বাহী বিভাগ বা বিচার বিভাগ বা জনগণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। এতে বুঝা যায় যে, মৌল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের কোন একক যন্ত্রেরই অংশবিশেষ হিসেবে কাজ করে এবং কোনটিই অপরটি হতে এদের গুরুত্ব, প্রভাব এবং কার্যকারিতার দিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন নয়। যখন ইংল্যান্ডে ১৯১১ সালের পার্লামেন্ট অ্যাক্ট হাউস অব লর্ডসের ক্ষমতা হ্রাস করেছিল, তখন পার্লামেন্টের গণনির্বাচিত নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের মেয়াদ সাত বছর হতে পাঁচ বছরে হ্রাস করে তার এ ক্ষমতা বৃদ্ধিকে আংশিকভাবে প্রতিহত করা হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষত আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগকে পৃথক করা হয়, অথচ যেখানে ফলপ্রসূভাবে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নিবিড় সংযোগ থাকা উচিত সেখানে রাজনৈতিক দলই এ প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সংযোগ সাধনকারী হিসেবে কাজ করে। মুল্যবান ভূমিকা পালন করে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, সংবিধানের কোন অংশের যথার্থ তাৎপর্যকে বুঝতে হলে তাকে অন্যান্য অংশের সাথে একসাথে অধ্যয়ন করতে হবে এবং সংবিধানের সকল অংশের মধ্যে অবশ্যই কার্যকারিতাগত সহযোগিতা থাকতে হবে। বস্তুত প্রত্যেক সংবিধানই এটার সমসাময়িক কালে সমাজের বিরাজমান বাস্তব পরিস্থিতি এবং প্রচলিত বিশ্বাসের ফলস্বরূপ। যে কোন সংবিধানই সমসাময়িক সমাজের প্রয়োজনসমূহ মিটানোর পথ নির্দেশ করতে সচেষ্ট হয়।

ii. মৌল বিধানাবলি : মৌল বিধানাবলি বলতে দেশের মৌলিক আইন বা প্রত্যেক সংবিধানের দ্বারা নাগরিকগণের প্রতি নিশ্চিতকৃত মৌলিক” নিশ্চয়তাগুলোকেই (Fundamental gurantees) বুঝায়, যেগুলো ব্যতীত জনসাধারণের কল্যাণসাধন করা সম্ভব নয়। মূলত সকল রাষ্ট্রই একথা দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করে যে, এদের মৌলিক বিধান বা প্রতিষ্ঠানসমূহ রয়েছে এবং এরা এসব মৌলিক বিধানকে সংবিধান বা তার সমতুল্য অন্য কোন নামে অভিহিত করে থাকে। অন্তত সপ্তদশ শতাব্দীর পর হতেই গ্রেট ব্রিটেনে সংবিধান সাধারণ আইনের চেয়ে উচ্চতর ক্ষমতাশালী এবং অধিকতর মৌলিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বস্তুত মানুষের স্বাধীনতা, সম্পত্তি, পারিবারিক জীবন, ধর্ম, দেশ, বন্ধুত্ব ইত্যাদিকে কোন অবস্থাতেই প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া যায় না। দৃষ্টান্তস্বরূপ, বাংলাদেশের সংবিধানে কতকগুলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা বিধান মৌলিক হিসেবে স্বীকৃত এবং গৃহীত হয়েছে নাগরিকগণের জীবনধারণের স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, সুবিচার এবং সমআচরণ লাভের স্বাধীনতা, এককেন্দ্রিক প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার ব্যবস্থা, বহুদলীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, মৌলিক বিধান বা প্রতিষ্ঠানগুলো যে অপরিবর্তনীয় তা নয়। কোন জনসমাজে প্রচলিত আদর্শগত মূল্যবোধসমূহের সাথে মৌলিক বিধান বা প্রতিষ্ঠানগুলোর এক সুনিশ্চিত সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে এখন কোন মৌলিক বিধান নেই, যা পরিবর্তিত হয় না বা যা পরিবর্তন করা উচিতও নয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সব সরকারের উৎস হচ্ছে তার সংবিধান। একটি সরকারের পথ নির্দেশক হিসেবে একটি সংবিধান কাজ করে থাকে। সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধির মধ্যে সুষম ব্যবস্থা ও মৌল বিধানাবলি উল্লেখযোগ্য। সুষম ব্যবস্থার মধ্যে বিভিন্ন দিক সুক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং মৌল বিধানাবলির মধ্যে রাষ্ট্রের তাৎপর্য ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। একটি সংবিধানের জন্য এ দুটি ব্যবস্থা অবশ্যই অপরিহার্য। এ দুটি ব্যবস্থা ছাড়া কোন ভালো সংবিধানের কথা ভাবা যায় না। তাই বলা যায় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসের ভিত্তিতে সংবিধানের প্রকৃতি ও পরিধি। উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।