অথবা, বাংলাদেশের দুর্নীতির প্রভাব আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের দুর্নীতির ফলাফল লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ২০০১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত হয়। ২০০১ সালের ২৭ জুন প্যারিসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতির ধারণা সূচক তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ৯১টি দেশের নাম প্রকাশ করে। এ সূচক অনুসারে বাংলাদেশ এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ।বাংলাদেশে দুর্নীতির ফলাফল নিম্নে বাংলাদেশে দুর্নীতির ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১. অবৈধ ক্ষমতার অপব্যবহার বেড়েছে।
২. দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পথ সুগম হয়েছে।
৩. দুর্নীতির সঙ্গে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
৪. দুর্নীতির কারণে দেশের জাতীয় আয়ের তিন শতাংশ অপচয় হয়েছে।
৫. দুর্নীতি না হলে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান দ্বিগুণ উন্নত হতো।
৭. দুর্নীতির ফলে সমাজের নৈতিক মান হ্রাস পেয়েছে।
৮. প্রশাসনের দক্ষতা কমে গেছে।
৯. জাতির মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে হতাশা।
১০. উৎপাদন ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা।
১১. দুর্নীতি দারিদ্র্য মোচনের ক্ষেত্রে প্রধান বাধার সৃষ্টি করেছে।
১. সামাজিক অসমতা ও গরিবদের বঞ্চনা বৃদ্ধি : দুর্নীতি বিস্তারের ফলে ধনীদের চেয়ে গরিবরা বেশি বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয় । বঞ্চনার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ও শিল্পায়িত দেশ নির্বিশেষে অসমতা, মানব অস্তিত্ব ও পরিবেশের সম্পর্ক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায় বিচারের অভাবে ধনী ও পুরুষের মধ্যে রয়েছে বৈষম্য। আয়ু, স্বাস্থ্য, সাক্ষরতা, বিশুদ্ধ পানি ও
সুন্দর পরিবেশে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে অসমতা রয়েছে
২. দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি ব্যর্থ : দুর্নীতির ফলে দারিদ্র্য বিমোচনের অনেক কর্মসূচিই ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘ, সুস্থ ও সৃষ্টিশীল জীবন উপভোগের উদ্দেশ্যে জনগণের জন্যে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করাই উন্নয়নের আমূল লক্ষ্য। অথচ উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যাপকতা বৃদ্ধি সাথে সাথে দুর্নীতিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. মানব সম্পদের অপচয় : জাতীয় অসমতা সম্পদ ও সুযোগের ক্ষেত্রে সুযোগহীন গোষ্ঠীর প্রবেশাধিকার সীমিত করে দেয়। তাদেরকে পছন্দ-অপছন্দের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করে। এভাবে মূল্যবান মানব সম্পদের অপচয় ঘটে।
৪. উন্নয়নের চূড়ান্ত লক্ষ্য ব্যাহত : উন্নয়নের চূড়ান্ত লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ। কিন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে পণ্য ও আর্থিক সম্পদ পুঞ্জীভূত করার সময় মানব কল্যাণের আসল উদ্দেশ্যই ভুলে যাওয়া হয়।
৫. অন্যায় অত্যাচার বৃদ্ধি : সাধারণত দুর্নীতিহীন কাজকর্মই হচ্ছে দুর্নীতি। এর ফলে সমাজে কেবলমাত্র বিশৃঙ্খলাই সৃষ্টি হয় না, সাথে সাথে অন্যায় ও অত্যাচারের রাজত্বও কায়েম হয়।
৬. মেধার অবমূল্যায়ন : দুর্নীতি বৃদ্ধি পেলে মেধার অবমূল্যায়ন ঘটবে। অর্থাৎ, তখন যোগ্য ও অযোগ্যের মাপকাঠি মেধা না হয়ে অর্থ কিংবা স্বজনপ্রীতিই হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ দুর্নীতির হার তুলনামূলকভাবে বেশি। সাধারণত আইনবিরোধী সামাজিক, রীতিনীতি ও মূল্যবোধ পরিপন্থি কার্যাবলিকে দুর্নীতি বলে। এটি কেবল সমাজে সমস্যার সৃষ্টি করে না সমাজের প্রচলিত নয়মনীতিকে পরিবর্তনও করে। মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়, অর্থনৈতিক অবনতি, দেশপ্রেমের অভাব, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি কারণে সমাজে দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়।