শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব কী?

অথবা, শ্রেণি ও শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্ব বলতে কী বুঝায়?
অথবা, শ্রেণি ও শ্রেণি সংগ্রামের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
মার্কস এবং এঙ্গেলস এর আর একটি বৈপ্লবিক অবদান শ্রেণিসংগ্রাম এবং কৌশল সম্পর্কিত আলোচনা। সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শ্রেণিসংগ্রাম যে, একটি বৈপ্লবিক ভূমিকা গ্রহণ করে সমাজ বিকাশের ধারার সাহায্যে তাঁরা তাঁর বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।
চালের শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব : ঐতিহাসিক বস্তুবাদের তত্ত্ব অনুযায়ী বৈরী উৎপাদন সম্পর্ক উৎপাদন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী সংখ্যালঘুদের সাথে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের সংঘাত ও সংকট সৃষ্টি করে। আদিম সাম্যবাদী সমাজের ভাঙনের পর থেকে ইতিহাসের এ ধারাটিকে অনুসরণ করে অগ্রসর হয়েছে। মার্কস একেই বলেছেন শ্রেণিসংগ্রাম। মার্কস এবং এঙ্গেলস কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোতে সমাজে ইতিহাসকে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাসরূপে অভিহিত করে
বলেছেন, আজ পর্যন্ত যত সমাজ দেখা গেছে তাদের সকলের ইতিহাসই শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রবক্তা এডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকার্ডো সমাজের শ্রেণি উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সমাজ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত; যথা : (ক) পুঁজিবাদী, (খ) জমিদার, (গ) শ্রমিক। এ তিনটি শ্রেণির পার্থক্যের মূল কারণ নিহিত রয়েছে তাদের আয়ের উৎস ভিন্ন। পুঁজিপতি মুনাফা অর্জন করে, জমিদার সংগ্রহ করে খাজনা ও শ্রমিকের আয়ের উৎস হলো মজুরি। এডাম স্মিথ ও রিকার্ডোর মতে, সমাজের এ বিভাজন যুক্তিসংগত। এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। কারণ অসম আয় থেকেই এ শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে মার্কসই প্রথম সমাজে শ্রেণির উদ্ভবের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেণির চরিত্র সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেন। তিনি যে, নতুন অবদানটি রেখেছিলেন তা হলো যে, ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায় উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশের সাথে যে শ্রেণি অবস্থিতির প্রশ্নটি সম্পৃক্ত সে সত্যটি প্রতিষ্ঠিত করা।