উত্তর: ভূমিকা:সাধারণত শ্রম বলতে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সব কর্ম প্রচেষ্টাকে বোঝায়। অর্থাৎ উৎপাদনশীল মানসিক কর্ম প্রচেষ্টা হলো শ্রম মানুষের সব কর্মই শ্রম নয়। শুধুমাত অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষ যে পরিশ্রম করে তাকে শ্রম বলে। অধ্যাপক মার্শাল বলেন মানসিক বা শারীরিক যেকোনো প্রকারের পরিশ্রম যা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে আনন্দ ছাড়া অন্য কোনো উপকারের নিমিত্তে করা হয় তাই শ্রম উৎপাদনের দ্বিতীয় মৌলিক উপাদান। এর যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিম্নরূপঃ
১. মানবিক ও জীবন্ত উপাদানঃ শ্রম একটি মানবিক ও জীবন্ত উপাদান। শ্রমের মালিক শ্রমিক জীবিত থাকলেই শ্রমও জীবন্ত থাকে এবং শ্রমিকের মৃত্যুর সাথে শ্রমেরও মৃত্যু হয়।
২. শ্রম ক্ষণস্থায়ী: শ্রম ক্ষণস্থায়ী। তাই অব্যবহৃত শ্রম সঞ্চিত থাকে না নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদনে শ্রম নিয়োজিত না হলে তা চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়।
৩. শ্রম ও শ্রমিক অবিচ্ছেদ্য: শ্রমের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শ্রমিক হতে শ্রমকে পৃথক করা যায় না। তাই শ্রম বিক্রয়ের সময় উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিকের উপস্থিতি অপরিবহার্য। সুতরাং শ্রম ও শ্রমিক অবিচ্ছেদ্য।
৪. শ্রম গতিশীল: উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে শ্রমের গতিশীলতা তুলনা মূলকভাবে বেশি। শ্রমিক এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক পেশা থেকে অন্য পেশায় স্থানান্তরিত হয়।
৫. শ্রমিকের দর কষাকষির ক্ষমতা কমঃ শ্রম ক্ষণস্থায়ী। এ ক্ষণস্থায়ী বৈশিষ্ট্যের কারণে নিয়োগকর্তার সাথে মজুরির হার নিয়ে শ্রমিক বেশি দর কষাকষি করতে পারে না। বেকার থাকার পরিবর্তে কম পারিশ্রমিকেও সে কাজ করতে বাধ্য হয়।
৬. বেশি মজুরিতে কম যোগান:মজুরি বাড়ালে শ্রমের যোগান অনেক সময় কমে। কারণ বেশি মজুরি পেলে শ্রমিকেরা অধিক বিশ্রাম লাভ করতে চায়। ফলে শ্রমের যোগান কমে যেতে পারে।
৭. সঞ্চয় অসম্ভব ঃ শ্রমকে সঞ্চয় করা যায় না। একদিন শ্রমিক কাজ না করলে পুরদিন আর সেদিনের কাজ করা যায় না। কারণ শ্রমকে সঞ্চয় করে রাখা যায় না।
৮. বুদ্ধি ও বিচার শক্তি: বুদ্ধি ও বিচারশক্তি শ্রমের অংঙ্গ। মানুষের বুদ্ধি বা মনের কাজ যন্ত্রের দ্বারা চলে না। বরং যন্ত্রকে চালানোর উপাযোগী করে তোলা শ্রমিকের বুদ্ধি ও বিচার শক্তিরই ফল। আধুনিককালে শ্রম যন্ত্রভিত্তিক হওয়ায় শ্রমিকের বিচার বুদ্ধির গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
৯. শ্রম সক্রিয় উপাদানঃ শ্রম একটি সক্রিয় উপাদান। ভূমি ও মূলধনকে শ্রমই উৎপাদনক্ষম করে তোলে।
১০. শ্রমিক শ্রম বিক্রয় করে, নিজকে নয়: একজন শ্রমিক মজুরির বিনিময়ে তার শ্রম বিক্রয় করে, নিজকে নয়।তবে শ্রম বিক্রি করলেও এর মালিকানার কোন পরিবর্তন হয় না।
১১. শ্রমের যোগানের পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ: শ্রমের যোগান নির্ভর করে দেশের জনসংখ্যা ও এর দক্ষতার উপর। অর্থাৎ দেশের জন্ম-মৃত্যুর হার সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার সুবিধার উপর। তাই মজুরি বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমের যোগন বাড়ানো যায় না।
১২. শ্রম উৎপাদনের উপকরণ ও উদ্দেশ্যঃ শ্রম দ্রব্য উৎপাদনে অংশ গ্রহণ করে আবার সে উৎপাদিত দ্রব্য নিজে ভোগও করে। সুতরাং শ্রম একদিকে উপকরণ অন্যদিকে উৎপাদনের উদ্দেশ্যও বটে।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে আমরা বলতে পারি শ্রম হলো মানুষের কর্ম প্রচেষ্টা যার দ্বারা কোনো দ্রব্য উৎপাদিত হয়। এ ছাড়াও শ্রমের আরও নানাবিধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা উপরের আলোচনায় প্রতিয়মান হয়।