অথবা, শ্রমিক সংঘের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দেখাও।
উত্তর:শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য কাজ করে থাকে। তবু শ্রমিক সংঘের কিছু সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে।
সুবিধাসমূহঃ শ্রমিক সংঘের সুবিধাসমূহ নিম্নরূপঃ
১. দর কষাকষির ক্ষমতাঃ শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের দর কষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে শ্রমিক এককভাবে দুর্বল হলেও যৌথভাবে মালিক পক্ষের কাছ থেকে ন্যায্য মজুরি আদায় করে নিতে পারে।
২. বিরোধ নিষ্পত্তিঃ শ্রমিক সংঘের মাধ্যমে দেশের শিল্প বিরোধের নিষ্পত্তি বা অবসান হয়। শ্রমিকদের আন্দোলনও শান্তি পূর্ণ সমাধানে শ্রমিক সংঘ ভূমিকা রাখে।
৩. কল্যাণমূলক কার্যক্রম। শ্রমিক সংঘ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রমিকদের দৈহিক ও মানসিক উন্নতি, কম দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
৪. শ্রমিকদের স্বার্থে আইন প্রণয়ন। শ্রমিক সংঘের মাধ্যমে আইন সভা কর্তৃক শ্রমিকদের স্বার্থে আইন প্রণয়নের জন্য বাধ্য করতে পারে।
৫. সু-সম্পর্কঃ শ্রমিকদের মধ্যে পারস্পরিক সু-সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তুলার ক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘ কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।।।
৬. মর্যাদাঃ শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের মর্যাদা ও আত্ববিশ্বাস বৃদ্ধি করে। সমাজ ও উৎপাদন ক্ষেত্রে তাদের অবদান সম্পর্কে শ্রমিক সংঘের মাধ্যমে সচেতন হয়ে উঠে।
৭. কাজের শর্তাবলি উন্নত করাঃ শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের স্বার্থে কাজের সময়সীমা হ্রাস, কাজের মাঝে অবসর, পেনশনের ব্যবস্থা, বোনাস প্রদান ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাজের শর্তাবলি উন্নত করতে পারে।
৮. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধা করে দিতে পারে। এতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
৯. শ্রমিক শোষণ ও নির্যাতন বন্ধঃ মালিক পক্ষ যেন শ্রমিক শোষণ ও নির্যাতন না করে সে সেক্ষেত্রে শ্রমিক সংঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১০. বিভিন্ন সমস্যার সমাধানঃ শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের সকল সমস্যা ও অভিযোগ সর্ম্পকে জ্ঞাত হয়ে মালিক পক্ষকে অবহিত করে সমাধান করে থাকে।
অসুবিধাসমূহঃ শ্রমিক সংঘের যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধা রয়েছে-যা কখনো কখনো মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। তা হল নিম্নরূপঃ
১. বেকারত্ব বৃদ্ধিঃ শ্রমিক সংঘ অনেক সময় নতুন শ্রমিক নিয়োগে বাধা প্রদান করে। কারণ, তারা মনে করে নতুন। শ্রমিক নিয়োগ দিলে তাদের মজুরি কমে যাবে। ফলে দেশে বেকার সমস্যা না কমে বৃদ্ধি পায়।
২. দুর্নীতি: সাধারণ শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলে। কিন্তু অনেক সময় নেতারা ঘুষ খেয়ে শ্রমিকদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে।
৩. ভাংচুর ও অবরোধঃ শ্রমিকরা প্রায়ই তাদের যে কোন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করে, সড়কপথ বন্ধ করে দেয়। ফলে জন দুর্ভোগ বাড়ে।
৪. বিশৃংখলা সৃষ্টিঃ মজুরি বৃদ্ধির নামে প্রায়ই আদর্শহীন আন্দোলনে লিপ্ত হয়ে উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে উৎপাদন ব্যাহত করে।
৫. তালা বন্ধঃ শ্রমিক সংঘ অনেক সময় সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য এমন কিছু দাবি করে বসে যা মালিক পক্ষ মানতে পারে না। ফলে মালিক পক্ষ কারখানায় লক আউট ঘোষণা করে। যখন শ্রমিকরা খুবই সমস্যায় পড়ে।
৬. উৎপাদন হ্রাস: অনেক সময় শ্রমিকরা নেতাদের পরামর্শে ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করে। ফলে কারখানার উৎপাদন হ্রাস পায় এবং দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
৭. অতিরিক্ত মজুরি দাবি ঃ শ্রমিক সংঘ অনেক সময় অতিরিক্ত মজুরি দাবি করতে পারে। যে মজুরি প্রদান করার ক্ষমতা বাস্তবে মালিক পক্ষের নেই। ফলে কারখানার সার্বিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়।
৮. দেশের উন্নয়নে বাঁধাঃ শ্রমিক সংঘের অতিরিক্ত কর্মবিরতি ধর্মঘট, আন্দোলন ইত্যাদির প্রভাব পড়ে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে। এতে দেশে উন্নয়নের গতি মন্থর হয়ে পড়ে।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, শ্রমিক সংঘের যেমন কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। এ সকল অসুবিধাসমূহ দেশের অমঙ্গল বয়ে নিয়ে আনতে পারে।