শ্বেতম্বর ও দিগম্বর সম্পর্কে যা জান লিখ।

অথবা, জৈন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়গুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
অথবা, জৈন ধর্ম সম্প্রদায় কয় ভাগে বিভক্ত ও কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
জৈন দর্শন খুবই প্রাচীন দর্শন। প্রাগৈতিহাসিক যুগে জৈন ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল। চব্বিশ জন তীর্থঙ্কর জৈন ধর্মের প্রচারক। সর্বপ্রথম তীর্থঙ্কর হলেন ঋষভদেব এবং সর্বশেষ তীর্থঙ্কর হলেন বর্ধমান। বর্ধমানের অপর নাম মহাবীর। তিনি গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ছিলেন। বস্তৃত মহাবীরকেই জৈন ধর্মের প্রবর্তক এবং প্রতিষ্ঠাতা বলে
সাধারণত ধারণা করা হয়।
জৈন সম্প্রদায় : জৈন ধর্ম এবং দর্শনের প্রধান গ্রন্থ গুলোতে যেসব উপদেশ ও বাণী আছে সেসব মহাবীরের অবদান বলে মনে করা হয়। দর্শনের মূলনীতির কেন্দ্র করে জৈনগণের মধ্যে কোন পার্থক্য না থাকলেও ধর্মীয় আচারব্যবহার নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয় এবং তারা দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এ দুটি সম্প্রদায় হলো- শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর সম্প্রদায়।
শ্বেতাম্বর সম্প্রদায় : ধর্মীয় নিয়ম ও আচার অনুষ্ঠান পালনের ব্যাপারে শ্বেতাম্বর সম্প্রদায় উদার মনোভাবাপন্ন ছিলেন। মহাবীর নির্দেশিত যেসব উপদেশ ও বাণী রয়েছে সেগুলো যে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে শ্বেতাম্বরেরা সে কথা বলেন নি।
শ্বেতাম্বরদের পোশাক পরিচ্ছদ : শ্বেতাম্বরগণের মতে, যারা ধর্মপ্রচারের কাজ করবেন বা জৈন নীতিকথা সাধারণের মাঝে প্রচার করবেন অর্থাৎ যারা সন্ন্যাসী তারা সাধারণ লোকের ন্যায় বস্ত্র পরিধান করবেন না। তাঁদের মতে, সন্ন্যাসীদের শ্বেতবস্ত্র পরিধান করা উচিত।
শ্বেতাম্বরদের জাগতিক জীবন : শ্বেতাম্বরদের মতে, সন্ন্যাসীরাসহ সব মানুষ সব ধরনের জাগতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করবে এবং পর্যাপ্ত সম্পদের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করবে যাতে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে নিজেকে নিয়োজিত করলে তার নিজেকে অন্যের দ্বারস্থ হতে না হয়।
দিগম্বর সম্প্রদায় : ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন এবং ব্যক্তিগত আচার নিষ্ঠায় কঠোর স্বভাবের হওয়ার কথা বলেন দিগম্বর সম্প্রদায়। তাদের মতে, ধর্মীয় নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। তীর্থঙ্করদের নির্দেশিত পথ থেকে কোন ক্রমেই বিচ্যুত হওয়া যাবে না।
দিগম্বরদের পোশাক পরিচ্ছদ : দিগম্বরদের মতে, যারা ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত থাকবেন এবং মানুষকে নৈতিক জ্ঞান প্রদান করবেন তারা বা সন্ন্যাসীরা নগ্ন অবস্থায় থাকবেন। কারণ তাদের বিশেষ ধরনের পোশাক তাদের মধ্যে অহমিকার জন্ম দিতে পারে এবং তারা ধর্মীয় নির্দেশনা থেকে বিচ্যুত হয়ে স্বীয় গুণকীর্তন শুরু করতে পারে।
দিগম্বরদের জাগতিক জীবন : দিগম্বরদের মতে, সন্ন্যাসীদের সহায় সম্বলহীন থাকা উচিত এবং জাগতিক কোন বস্তুর প্রতি তাদের আসক্তি থাকা উচিত নয়। সন্ন্যাসীরা যদি জাগতিক ধনসম্পদ অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করে তাহলে ধর্ম ও নৈতিকতার যথার্থ প্রচার ও বিকাশে তা বাধার সৃষ্টি করবে।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ে শ্বেতাম্বর ও দিগম্বরদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও এ উভয় সম্প্রদায়ই তীর্থঙ্করদের উপদেশ মেনে চলতেন। সর্বজ্ঞতা, সর্ব শক্তিমত্তা প্রভৃতি ঐশ্বরিক গুণে বিভূষিত তীর্থঙ্করগণকে তারা ঈশ্বরের ধারণার স্থলাভিষিক্ত করেন। তাদের মতে, সর্বসাধারণের উচিত এই তীর্থঙ্করদের পূজা অর্চনা করা। তারা বলেন, তীর্থঙ্করদের পবিত্র চরিত্রকে অনুসরণ করে যে কোন ব্যক্তি মুক্তির দুর্গম পথে অগ্রসর হতে পারে।