শিশুদের চাহিদাসমূহ পূরণ না হওয়ার ফলে কি কি সমস্যা সৃষ্টি হয়?

অথবা, শিশুদের চাহিদাসমূহ পূরণ না হলে উদ্ভূত সমস্যাগুলো লিখ।
অথবা, তোমার মতে শিশুদের চাহিদা যথাযথ পূরণ না হলে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে কর।
অথবা, শিশুদের চাহিদাসমূহ পূরণ না হলে যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয় তা নিজের ভাষায় লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : একটি দেশ তথা জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার হল শিশু। কারণ আজকের শিশুই আগামী দিনের দেশ ও জাতির পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। তাই বর্তমান বিশ্বে শিশুর চাহিদা পূরণের জন্য এখন বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোও শিশুদের চাহিদা পূরণের দিকে আস্তে আস্তে সচেতন হচ্ছে এবং সে লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করছে। পেশাদার সমাজকর্মেও শিশু কল্যাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাই সমাজকর্মের ছাত্র হিসেবে শিশুদের চাহিদা, চাহিদা অপূরণজনিত উদ্বুদ্ধ সমস্যাগুলো আমাদের জানা দরকার।
শিশুর চাহিদা অপূরণজনিত সমস্যা : শিশুর চাহিদার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শিশুর চাহিদা পূরণ করা শিশুর সার্বিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য। অর্থাৎ শিশুর চাহিদা পূরণ না হলে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হবে। শিশুর চাহিদা পূরণ না হওয়ার ফলে যেসব সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় তা নিম্নে পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করা হল :
১. প্রতিবন্ধী শিশু : যেহেতু শিশুর চাহিদা তার মাতৃগর্ভ থেকে শুরু হয় তাই মায়ের পেটে থাকাকালীন মা যদি যথাযথ পরিচর্যা না পায় তবে তা শিশুকে প্রভাবিত করে। মা যদি কোন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন, নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন, অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণ করেন তবে ঐ মা অনেক সময়ই প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দিয়ে থাকেন।
২. পুষ্টিহীনতা : মানুষের দেহে ছয়টি খাদ্য উপাদান যখন সঠিক মাত্রায় না থাকে অর্থাৎ কোন কোন উপাদানের ঘাটতি থাকে তখন সে অবস্থাকে পুষ্টিহীনতা বলে। আমাদের দেশে প্রায় ৭০% শিশু পুষ্টিহীনতার শিকার। কারণ দেখা যায়, আমাদের অধিকাংশ জনসাধারণই দরিদ্র। ফলে তাদের পক্ষে তাদের শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার প্রদান করা সম্ভব হয় না। ফলে এসব শিশুরা ব্যাপকহারে পুষ্টিহীনতার শিকার হয়।
৩. রোগগ্রস্ততা বা রোগাক্রান্ত শিশুদের মৌলিক চাহিদা হল উপযুক্ত স্বাস্থ্য সেবা। যদি শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা করা না যায় তবে তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগব্যাধি শিশুদেরকে অনেক সময় শারীরিক ও
মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। ফলে তারা দেশ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
৪. শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত : শিশুদের অন্যতম একটি চাহিদা হল শিক্ষা। শিক্ষা শিশুকে তার জ্ঞানচক্ষু বিকশিত হতে সহায়তা করে। শিক্ষা প্রত্যেকটি শিশুর একটি চাহিদা হিসেবে সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃত। শিশু যদি তার এ প্রয়োজনটি পূরণ করতে না পারে তবে সে অশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠে। তার মধ্যে মনো-সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৫. নিরাপত্তাহীনতা : শিশুরা হল সমাজের সবচেয়ে অক্ষম ও অসহায় শ্রেণী। তাদের চাহিদা তাদের নিজেদের দ্বারা পূরণ করা আদৌ সম্ভব নয়। এজন্য তাদেরকে তাদের মা-বাবা, পরিবার তথা সমাজের উপর নির্ভর করতে হয়। শিশুদের চাহিদা যদি যথাযথভাবে পূরণ না হয় তবে তাদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠা এমনকি বেঁচে থাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, শিশুদের চাহিদার বিষয়টি সবাইকে সব প্রয়োজন ও চাহিদার আগে স্থান দিতে হবে। কারণ দেশের ভবিষ্যৎ উন্নতি ও সমৃদ্ধির দায়িত্ব এক সময় এ শিশুদের হাতেই বর্তাবে।আর যদি চাহিদা পূরণের মধ্য দিয়ে তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে তবেই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হবে। তাই শিশুদের চাহিদা পূরণের জন্য পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকে আরও সচেতনভাবে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।