শিল্প সমাজের প্রধান দিকগুলো কী?

অথবা, শিল্প সমাজের প্রধান দিকসমূহ তুলে ধর।
অথবা, শিল্প সমাজের প্রধান দিকসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, শিল্প সমাজের প্রধান দিকসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকাঃ
মানবসমাজের বিবর্তন ধারাকে আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অবতারণা ঘটেছে। বর্তমানে মানুষ শিল্প যুগে বসবাস করছে। সামাজিক বিবর্তনের এ পর্যায়ে মানুষ শিল্পকারখানা স্থাপন করে সমাজব্যবস্থাকে গড়ে তোলে। সমাজের যাবতীয় কর্মকাণ্ডও শিল্পনির্ভর হয়ে উঠে। শিল্প সমাজ বিবর্তনের চূড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান করে বা সমাজকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পরিচালিত করে।
শিল্প সমাজ (Industrial society) : সাধারণত শিল্পায়ন বলতে কলকারখানা স্থাপন এবং সেগুলোর প্রসার লাভকে বুঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, শিল্পায়ন হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার দ্বারা উৎপাদন ক্ষেত্রে হস্তচালিত যন্ত্রের পরিবর্তে শক্তিচালিত যন্ত্রের প্রয়োগ এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করা হয়। অষ্টাদশ শতক থেকে জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হতে থাকে। এ সময় থেকে মানুষ নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে পরিচিতি লাভ করে। উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
শিল্প সমাজের প্রধান দিকগুলো : নিম্নে শিল্প সমাজের প্রধান দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি : শিল্প সমাজ আধুনিক পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে। শিল্পবিপ্লবের পূর্বে সমাজ ছিল সামন্ততান্ত্রিক। সামন্ততান্ত্রিক সমাজের অর্থব্যবস্থা থেকে শিল্প সমাজকে পৃথক করতে শিল্প সমাজের ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি সহায়তা করেছে। শিল্প সমাজ আধুনিক ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে।
২. প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন : শিল্প সমাজের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। শিল্প সমাজের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশল অপেক্ষাকৃত উন্নত এবং জটিল । মানুষ এ যুগে এসে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন করে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও বৈচিত্র্য আনয়ন করে। মানুষ পূর্বের তুলনায় উন্নত ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে শেখে। গৃহ সরঞ্জাম উন্নত হওয়ায় মানুষ জীবনযাপনে বিলাসিতা শুরু করে। এ সমাজে মানুষ ধাতুকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী উৎপন্ন করতে শেখে।
৩. শক্তির উৎস : শিল্প সমাজ শক্তির উপর নির্ভরশীল। শক্তির উপর নির্ভরশীলতা থেকেই শিল্প সমাজ অগ্রসর হয়। জ্বালানি হিসেবে এ সমাজ পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ, কয়লা প্রভৃতি ব্যবহার করে।
৪. উৎপাদন বৃদ্ধি : পূর্বে যেখানে হাতে কাজ করে অল্পসংখ্যক দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব হতো সেখানে শিল্পের সাহায্যে অধিক উৎপাদন সম্ভব হয়। অধিক উৎপাদন শিল্প সমাজকে দ্রুত উন্নতির পথে পরিচালিত করে।
৫. শিল্পকারখানা স্থাপন : শিল্প সমাজে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠে অসংখ্য ছোট বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বহু
মানুষের কর্মসংস্থান ঘটে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গিয়ে মানুষ মেধার বিকাশ ঘটায়।
৬. দাস মুক্তি : শিল্প সমাজে এসে দাস ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। পূর্বেকার সামন্ততান্ত্রিক সমাজের দাসপ্রথা শিল্প সমাজে এসে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৭. পরিবার ব্যবস্থা : শিল্প সমাজে পরিবার ব্যবস্থায় পরিবর্তন সূচিত হয়। যৌথ পরিবারের স্থলে এ সমাজে একক পরিবার ব্যবস্থা গড়ে উঠে। বহুবিবাহের প্রচলন লোপ পায়। উন্নত চিকিৎসার আবির্ভাবের মধ্যদিয়ে মৃত্যুহার কমে যায়। নারীর স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। Lenski বলেছেন, “The rise of industrial societies has also brought greater freedom to women.”
৮. শিক্ষার প্রসার : শিক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার ও বিস্তৃতি শিল্পভিত্তিক সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মানুষের জ্ঞানের জ গৎ এখানে ক্রমশ সমৃদ্ধ হতে থাকে। পূর্বতম সমাজব্যবস্থায় যেখানে শিক্ষা লাভের সুযোগ কতিপয় ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সেখানে শিল্প সমাজে এসে শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়।
৯. অর্থনৈতিক ব্যবস্থা : শিল্পায়িত সমাজে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠে। শিল্পের প্রসারের সাথে সাথে ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। এভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়ে উঠে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শিল্পায়ন হচ্ছে একটি সাধারণ প্রক্রিয়া যার দ্বারা হস্ত চালিত উৎপাদন এবং কৃষিভিত্তিক সমাজ ও অর্থনীতি পরিবর্তিত হয়ে শিল্পভিত্তিক সমাজ ও অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়। মানুষ আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে শিল্প সমাজে পৌঁছেছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/