অথবা, শিল্প মনোবিজ্ঞানের কী কী কার্যাবলি রয়েছে? উত্তর :
ভূমিকা : শিল্প মনোবিজ্ঞান ফলিত মনোবিজ্ঞানের একটি কার্যকরী শাখা। শিল্পক্ষেত্রে শিল্প মনোবিজ্ঞানের কার্যাবলি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত। শিল্পকারখানায় শ্রমিক এবং কর্মচারী নিয়োগ তাদের যথার্থ প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি, মূল্যায়ন শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন, উপযুক্ত উৎপাদনের জন্য কর্মপরিবেশ তৈরি, শিল্পে নিয়োজিত কর্মীদের মানসিক সমস্যার সমাধানকল্পে এ বিজ্ঞান পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
শিল্প মনোবিজ্ঞানের কার্যাবলি : শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানের কিছু জরুরি উদ্দেশ্য রয়েছে। এসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কতকগুলো কার্যাবলি সম্পন্ন করতে হয়। সম্প্রতি জ্ঞানবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এ কারণে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার সমস্যার উদ্ভব হওয়ায় শিল্প মনোবিজ্ঞানের কার্যাবলি অনেক গুণে বেড়ে গেছে। নিম্নে শিল্প মনোবিজ্ঞানের কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. কর্ম ও কর্মী বিশ্লেষণ : কর্ম ও কর্মী বিশ্লেষণ শিল্প মনোবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিল্পক্ষেত্রে নানা প্রকার সমস্যার প্রেক্ষাপটে শিল্প মনোবিজ্ঞান কাজের ধরন এবং কি প্রক্রিয়াতে কর্ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া কর্মীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, যা শিল্পের উৎপাদনের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত তা বিশ্লেষণ করাও শিল্প মনোবিজ্ঞানের কাজের পরিধির মধ্যে পড়ে।
২. প্রশাসনিক পরামর্শ প্রদান : শিল্প মনোবিজ্ঞানের প্রধান কাজ হলো শিল্পের সাথে জড়িত নানা বিষয়ে প্রশাসনকে পরামর্শ দান করা, যাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ সকল মানবীয় বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
৩. পরামর্শ প্রদান : শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীগণ কার্যসম্পাদন করতে গিয়ে নানা প্রকার সমস্যার মুখোমুখি হয়। এসব সমস্যা কিভাবে মোকাবেলা করে শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন করা যাবে এটা শিল্প মনোবিজ্ঞানের অন্যতম কাজ।
৪. কর্মী নির্বাচন : শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন শিল্প মনোবিজ্ঞানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ অর্থাৎ উপযুক্ত কাজের জন্য উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন করা শিল্প মনোবিজ্ঞানের কাজ। এক্ষেত্রে শিল্প মনোবিজ্ঞানিগণ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সাহায্যে কর্মীদের মানসিক ঝোঁক প্রবণতা এবং আগ্রহ মূল্যায়ন করে কর্মী নির্বাচনে প্রশাসনকে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করে থাকেন।
৫. প্রশিক্ষণ প্রদান : শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিল্প মনোবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ নীতি প্রণয়ন, কোর্স তৈরিকরণ, প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী মূল্যায়ন বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পন্ন করে থাকে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পকারখানায় দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে গিয়ে উৎপাদনের গুণগত ও পরিমাণগত বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়।
৬. শিল্পে মানবিক সম্পর্ক স্থাপন : শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঠিক পরিচালনা, উৎপাদন বৃদ্ধি, দুর্ঘটনা হ্রাস ইত্যাদি বহুলাংশে নির্ভর করে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সদ্ভাবের উপর। শ্রমিক ব্যবস্থাপক সম্পর্ক ভালো হলে শিল্পে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এরকম ইতিবাচক মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলা শিল্প মনোবিজ্ঞানের অন্যতম কাজের মধ্যে একটি।
৭. পণ্যের বিজ্ঞাপন : শিল্প মনোবিজ্ঞানের একটি অন্যতম কাজ হলো কিভাবে বাজারের অন্যান্য পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজস্ব শিল্পের পণ্যকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়া যায়। আর এর জন্য দরকার নজর কাড়া বিজ্ঞাপন তৈরি করা। এ কাজটি শিল্প ম মনোবিজ্ঞানকে সফলভাবে করতে হয়। তাছাড়া উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের আগ্রহ, রুচি, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদি | সম্পর্কেও শিল্প মনোবিজ্ঞান থেকে জানা যায়।
৮. ক্লান্তি ও শ্রান্তি নিরীক্ষা : একটি কাজ সুন্দর ও সফলভাবে সম্পাদন করতে গেলে সাধারণত ক্লান্তি অনুভব হয়। এ ক্লান্তি কিভাবে বর্জন করা যায় এবং শ্রমিকরা যেন ঘনঘন ক্লান্তির শিকারে পরিণত না হয়ে অনেক সময় ধরে কাজ করতে পারে সেজন্য শিল্প মনোবিজ্ঞান প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে।
৯. আচরণ পরিবর্তন : শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের আচরণের উপর উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভর করে । তাই কর্মীদের আচরণ সুনির্দিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ এবং শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য কাঙ্ক্ষিত আচরণ আনয়নের জন্য উপযুক্ত দিকনির্দেশনা প্রদান করা শিল্প মনোবিজ্ঞানের অন্যতম কাজ।
১০. কর্মচারীদের মনোভাব গঠন : কর্মচারীদের প্রেষণাকে ইতিবাচক করে তাদের মধ্যে গঠনমূলক মনোভাব তৈরি করা শিল্প মনোবিজ্ঞানের একটি অন্যতম কাজ। একজন মনোবিজ্ঞানী সহজেই কর্মীদের মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করে কাজের প্রতি মনোভাব সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি তাদের মধ্যে উৎপাদনমুখী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকেন।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শিল্প মনোবিজ্ঞান প্রকৃতপক্ষে শিল্পক্ষেত্রে এবং ব্যবসায় বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত কর্মচারীদের আচরণ ও সমস্যা নিয়ে কাজ করলেও আজকাল শিল্পোন্নতি ও শিল্প সমস্যার সাথে সাথে এর কার্যাবলি প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শিল্প কর্মীদের উন্নয়ন, তাদের কাজে উৎসাহ উদ্দীপনা দান, এবং মানসিক ও আবেগজনিত সমস্যার সমাধানসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সর্বাধিক উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধির প্রায় সকল ক্ষেত্রেই শিল্প মনোবিজ্ঞান কার্যকর এবং প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করে চলছে।