উত্তরঃ ভূমিকা : শিল্প জাতীয়করণ বা সেন্ট্রিপুজারীকরণ হল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যা কোনো রাষ্ট্র বা সমাজের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পদকে জাতীয় আইডেন্টিটির একটি অংশ হিসেবে উন্নত করতে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত সংস্কৃতি, শিল্প, পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয় প্রেম, গর্ব এবং একত্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলির মধ্যে পরিমার্জন করে।
শিল্প জাতীয়করণ: সাধারণভাবে সরকার কর্তৃক শিল্পের মালিকানা গ্রহণকে শিল্প জাতীয়করণ বলে। আভিধানিক অর্থে, “ব্যক্তিগত সম্পদকে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীনে আনয়নের কাজকে জাতীয়করণ বলে।” যখন একটি সুচিন্তিত নীতির ভিত্তিতে দেশের শিল্প ও কল-কারখানা বেসরকারি মালিকানা হতে সরকারি ও নিয়ন্ত্রণে আনয়ন করা হয়, তখন তাকে শিল্প জাতীয়করণ বা রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বলে।
শিল্প জাতীয়করণের অসুবিধা:
১. পুঁজি বিনিয়োগে অচলাবস্থা: শিল্প জাতীয়করণের ফলে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ হ্রাস পায়। শিল্প জাতীয়করণেরকর্মসুচি অনেক সময় দেশে বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। জাতীয়করণের ফলে বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগ কমে যায় |
২. দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব : রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প পরিচালনার জন্য যে দক্ষ প্রশাসন কাঠামোর প্রয়োজন তা আমাদের দেশে নেই। এ কারণে আমাদের দেশে শিশ্প প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন বাড়াতে পারছে না।
৩. উৎসাহ ও উদ্দীপনার অভাব : অধিক মুনাফা লাভের আশায় ব্যক্তিগত মালিকানায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ফলে ব্যক্তি মুনাফা লাভের আশায় আরো বেশি পরিশ্রমী ও উৎসাহী হয়ে উঠে। এর কারণে অধিক উৎপাদন সম্ভব হয়। অপরপক্ষে, সরকারি মালিকানায় পরিচালিত ও শিল্পকারখানা মুনাফা প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত নয় বলে অধিক উৎসাহ ও উদ্দীপনার অভাব দেখা দেয়।
৪. ব্যক্তিস্বাহীনতার উপর হস্তক্ষেপ : শিল্পকে জাতীয়করণ করার বিপক্ষে অন্য একটি ঘুক্তি হলো এটা মানুষেরব্যক্তিষ্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করে। এছাড়া ব্যক্তি ষ্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করলে গণতন্ত্র ও জাতীয়করণ পাশাপাশি টিকে থাকতে পারে না।
৫. সমাজতান্ত্রিক মনোভাবের অভাব: সমাজতান্ত্রিক মনোভাবের অভাব শিল্প জাতীয়করণের বিপক্ষে একটি বিশেষ যুক্তি। এ ধরনের মনোভাব না থাকলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে শিল্পকে রাষ্ত্রীয় পরিচালনায় ছেড়ে দেওয়া হয় তা বাস্তবায়িত হয় না। কেননা, এ সময় দেশে যথেষ্ট সমাজতান্ত্রিক মনোভাবের অভাব দেখা দেয় ।৬. শ্রমিক অসন্তোষ : শ্রমিক অসন্তোষ শিল্প জাতীয়করণের বিপক্ষে অন্যতম যুক্তি। শিল্পকে রাষ্থ্রায়ভ্ত করা হলে শ্রমিকদের অংশীদারিত্বের অভাব দেখা দেয়। ফলে শ্রমিকগণ তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের সংগ্রাম করে থাকে। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে একটা অসন্তোষ বিরাজ করে।
৭. রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাব: সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ ও প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারে না। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন সে দল দলীয় স্বার্থ বজায় রাখার জন্য ব্যক্তির যোগ্যতা বিচার না করেই কর্মচারি নিয়োগ করে থাকে। ফলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে এ প্রতিষ্ঠানসমূহ কাজ চালিয়ে যেতে পারে না। তাই শিল্পকে জাতীয়করণে সমর্থন করা
উপসংহার : স্বাধীনতা-উত্তর পর্যায়ে বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করার ফলে অধিকাংশ শিল্পকে জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এ নীতি সফলতা পায়নি। এ কারণে বর্তমান সরকার দেশের বেশিরভাগ শিল্পকে বেসরকারীকরণের চিন্তাভাবনা করছে দেশের কল্যাণের লক্ষ্যে। তবে সরকারীকরণ ও বেসরকারীকরণের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলে শিল্পের উন্নতি তথা গোটা জাতির উন্নতি সম্ভব নয় ।