শিল্পোন্নত যুগের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিবরণ দাও।

অথবা, শিল্পোন্নত যুগের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষের পার্থিব প্রয়োজন মিটানোর জন্য যেসব প্রথা সমাজে মোটামুটি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে, সেসবকে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্পত্তির মালিকানা, শ্রমবিভাগ এবং বিনিময় ব্যবস্থা হলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক।
শিল্পোন্নত যুগের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান : শিল্প ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে যে অর্থনেতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠে তাকে শিল্পোন্নত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে। এ.অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
ক. ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং
খ.সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
ক. ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান : যেসব দেশে শিল্পের দিক দিয়ে যত বেশি উন্নত সেসব দেশে তত বেশি ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এ ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানেরও কতকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে । যথা :
১.প্রাক শিল্পযুগীয় সমাজে পরিবারকে কেন্দ্র করে উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু শিল্পায়নের ফলে একটি নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা চালু হয় এবং কলকারখানা হয়ে উঠল উৎপাদনকেন্দ্রিক। ফলে পরিবারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব হ্রাস পেল।
২. ধনতান্ত্রিক সমাজে অত্যন্ত জটিল শ্রমবিভাগের সৃষ্টি হয়। এ সমাজে শ্রমবিভাগ একদিকে মেশিনের প্রয়োগ সুগম করে, অপরদিকে মেশিন আরো সূক্ষ্ম শ্রমবিভাগের সূচনা করে।
৩.সামাজিক স্তরবিন্যাস শিল্পায়নের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। ফলে ভূমিকেন্দ্রিক স্তরবিন্যাসের সামাজিক সচলতার চেয়ে শিল্পোন্নত সমাজের সচলতা অপেক্ষাকৃত সহজ ও ব্যাপক হয়। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় মুনাফা অর্জন সকল অর্থনৈতিক কাজকর্মের লক্ষ্য হয়ে যায় এবং অর্জিত মুনাফার মাপকাঠিতে যে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাফল্য যাচাই হয়।
খ. সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান : ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মুনাফা সর্বাধিক করাই একমাত্র লক্ষ্য। এ লক্ষ্যার্জন করতে গিয়ে সর্বসাধারণের স্বার্থ লঙ্ঘিত হতে পারে। এমনকি তাদের অর্থনৈতিক শোষণ এবং নিপীড়ন মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়তে পারে। আয় এবং ধন বণ্টনে অসমতা উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এসব কারণে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানগুলোকে জাতীয়করণ করে সরকারি কর্মচারীদের উপর অর্থনৈতিক সংস্থার পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। যেহেতু ‘মুনাফা সর্বাধিক করার পরিবর্তে সমাজের কল্যাণ সর্বাধিক করার লক্ষ্য অগ্রাধিকার পাবে; সেহেতু আশা করা যায় যে, এ ব্যবস্থায় সমাজের সর্বাধিক মঙ্গল সাধন করতে পারবে। কিন্তু যেসব দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত আছে, সেখানে মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক লোকের হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে দেখা যায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মানুষের পার্থিব প্রয়োজন মিটানোর যেসব প্রথা সমাজে মোটামুটি স্থায়ীরূপ ধারণ করেছে তাকে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে সমাজ পরিচালিত হয়। সম্পত্তির মালিকানা, শ্রমবিভাগ ও বিনিময় ব্যবস্থা হলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক।