ভূমিকা: প্রশিক্ষণ হল একটি সুপরিকল্পিত ক্রিয়াকলাপ যার ফলস্বরূপ একটি সংস্থার কর্মচারীদের কার্যক্ষম জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মীদের মনোভাব এবং আচরণে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটে। শিল্পে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রশিক্ষণ শিল্প শ্রমিকদের দক্ষতার উন্নতি ও বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। একটি সফল প্রশিক্ষণ কর্মসূচী উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, অ্যাট্রিশন বা টার্নওভারের হার কমাতে সাহায্য করে এবং শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায়।
শিল্পক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যাবলি : নিম্নে শিল্পক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা করা হলো-
১. দক্ষতা উন্নয়ন: দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের একটি প্রধান উদ্দেশ্য। এটি অন-দ্য জব ট্রেনিং। বিভিন্ন পেশায় সাফল্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং প্রযুক্তি, নিপুণতা এবং সমন্বিত অঙ্গ আন্দোলনের দক্ষতা ড্রাইভিং মেশিনের কাজের জন্য প্রয়োজন এবং এই ব্যবস্থায় সাফল্য অর্জনের জন্য, মানুষকে প্রভাবিত করার এবং পরিচালনা করার ক্ষমতা, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি প্রয়োজন। তাই চাকরিমুখী প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো সঠিক চাকরিতে সঠিক গুণাবলী ও দক্ষতা বিকাশ করা।
২. সংবাদ সরবরাহ : প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য হল নবনিযুক্ত কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যাখ্যা করা এবং শিল্প সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করা। এর সাহায্যে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে কর্মচারীদের তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করা হয় এবং তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিষ্ঠানের নীতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করা যায়। এছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মচারীরা চাকরির নিয়মকানুন, প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো, পণ্য বিপণন ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।
৩. অবচয় প্রতিরোধ: শিল্পে প্রশিক্ষণের আরেকটি দিক হল গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল উৎপাদন খরচ কমানো এবং অবচয় রোধ করা। প্রশিক্ষণের অভাবে প্রায়ই কর্মচারীরা কাঁচামাল নষ্ট করে। আরও সময় এবং শক্তি অপচয় করে এবং সরঞ্জামের ক্ষতি করে। তাই এসব অপচয় রোধ করা এবং কম শ্রমে কম সময়ে অধিক পণ্য উৎপাদন করাই প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য।
৪. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: উৎপাদনের হার বৃদ্ধি শিল্পে প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য। কারণ একটি প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধি নির্ভর করে তার উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর। তাই উৎপাদন বাড়াতে হলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের কর্মদক্ষতা, কাজের প্রতি আগ্রহ, প্রেরণা, মনোবল বাড়াতে হবে। তাই উৎপাদন হার বৃদ্ধি প্রশিক্ষণের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।
৫. মনোভাবের পরিবর্তন: প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীদের জরাজীর্ণ মনোভাব পরিবর্তন করে কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা। কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন করার অনেক উপায় আছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাক-সংস্কার, কর্মচারীদের নেতিবাচক ও প্রতিকূল মনোভাব দূর করা এবং সকল শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে সদিচ্ছা ও সৌহার্দ্য স্থাপন কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করে এবং কাজের প্রতি আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
৬. দুর্ঘটনা হ্রাস এবং নিরাপত্তা বিধান: শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনেক বিপজ্জনক কাজ আছে যা দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রাখে। এই ধরনের দুর্ঘটনা উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে এবং এমনকি কর্মীদের জীবন বিপন্ন করতে পারে। তাই এসব দুর্ঘটনা এড়াতে এবং জীবনের নিরাপত্তা বাড়াতে অনভিজ্ঞ কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ চাকরির বিপজ্জনক দিকগুলো সম্পর্কে জানাতে হবে এবং দুর্ঘটনা কমাতে সঠিক কাজের চর্চা ও উন্নত পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে যথাযথ প্রশিক্ষণের সাহায্যে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমানো যেতে পারে যদি কর্মচারীদের দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করা যায় এবং নিরাপদ কাজের পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য সঠিক মনোভাব রাখা যায়।
৭. কাজের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি: চাকরির সন্তুষ্টি হল চাকরির প্রতি একজন কর্মচারীর ইতিবাচক মনোভাব। চাকরিতে সন্তুষ্টি না থাকলে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হয়। প্রশিক্ষণের সাহায্যে কাজের প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ ও মনোবল বাড়ানো যায় কাজের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদানের মাধ্যমে। যার মাধ্যমে কাজের সন্তুষ্টি বাড়ানো সম্ভব।
৮. মানব সম্পর্কের বিকাশ: শিল্পে মানবিক সম্পর্ক বলতে কর্মী এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা সম্পর্ককে বোঝায়। এই সম্পর্কগুলি যত ভাল এবং ঘনিষ্ঠ হবে, শিল্পের উত্পাদন তত বেশি সন্তোষজনক হবে। শিল্প খাতে সঠিক মানবিক সম্পর্ক মূলত দক্ষ ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে এবং এ ক্ষেত্রে পরিদর্শকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগ্য নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা অর্জনের জন্য, পরিদর্শককে কার্যকর প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তিনি তার দক্ষতা ও উদ্যম দ্বারা কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা ও আবেগ সৃষ্টি করতে পারেন এবং সংহতির চেতনা জাগিয়ে শ্রম ব্যবস্থাপকের দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় করতে পারেন শ্রমিকদের মধ্যে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সব শিল্প প্রতিষ্ঠানেরই উদ্দেশ্য থাকে উৎপাদনের হার বাড়ানো। আর তা সম্ভব যদি শিল্প প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য হয় প্রতিষ্ঠান ও কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা, যার সাহায্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এবং দক্ষতা এবং উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি। তাই যেকোনো প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত কাজের সন্তুষ্টি বাড়ানো।