শিল্পক্ষেত্রে দক্ষতা অভীক্ষাগুলো লিখ।
অথবা, ব্যক্তিত্ব পরিমাপের পদ্ধতিগুলো লিখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : কর্মচারী নির্বাচনের নানা রকম অভীক্ষার মধ্যে মনোবৈজ্ঞানিক বা মনস্তাত্ত্বিক এবং ব্যক্তিত্ব অভীক্ষাসমূহের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বিশ শতকের প্রথম দিকে হুগো মুনস্টারবার্গ সর্বপ্রথম কর্মচারী নির্বাচনের জন্য মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার প্রচলন করেন। এরপর থেকে শিল্পকারখানায় পর্যায়ক্রমে মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার প্রয়োগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষার গুরুত্ব মনোবিজ্ঞানে অনস্বীকার্য।
ব্যক্তিত্ব পরিমাণের অভীক্ষাসমূহ : ব্যক্তিত্ব পরিমাপের জন্য অনেক অভীক্ষা আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিত অভীক্ষাগুলো বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় :
ক. মিনোসোটা বহুমুখী অভীক্ষা : এ অভীক্ষাটি ব্যক্তিত্ব অভীক্ষাগুলোর মধ্যে বহুল পরিচিত একটি অভীক্ষা। এ অভীক্ষায় ৫৫০টি উক্তি রয়েছে। ‘সত্য’ ‘মিথ্যা’ ও ‘বলতে পারি না’ এই তিন ধরনের উক্তি থেকে প্রার্থীকে তার পছন্দমতো উত্তরটি নির্বাচন করতে হয়। এ উক্তিগুলো শারীরিক অবস্থা, নৈতিক বিশ্বাস, সামাজিক মনোভাব, পরিবার ও দাম্পত্য জীবন, ধর্মীয় মনোভাব ইত্যাদি বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ অভীক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের স্বভাবী ও অস্বভাবী আচরণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। তবে অভীক্ষাটি খুব দীর্ঘ এবং মূলত মানসিক বৈকল্য পরিমাপের জন্য রচিত বলে শিল্পক্ষেত্রে এর ব্যবহার কিছুটা কম।
খ. গিলফোর্ড ও জিমারম্যান প্রবণতা জরিপ : মনোবিজ্ঞানী গিলফোর্ড ও জিমারম্যান এ অভীক্ষাটির সংকলক। এ অভীক্ষায় ব্যক্তিত্বের ১০টি মৌলিক বৈশিষ্ট্য বা সংলক্ষণ পরিমাপ করে। এর প্রতিটি সংলক্ষণের উত্তর ৩০টি করে মোট ৩০০টি প্রশ্ন। নিচে অভীক্ষাটির ১০টি সংলক্ষণ দেওয়া হলো :
১. সাধারণ কার্যকলাপ,
২. সংযম,
৩. প্রাধান্য,
৪. সামাজিকতা,
৫. প্রক্ষোভমূলক ধৈর্য,
৬. বিষয়নিষ্ঠতা,
৭. বন্ধুত্বপরায়ণতা,
৮. চিন্ত শীলতা,
৯. ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও
১০. পৌরুষ।
গ. এডওয়ার্ডস ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসূচি : মনোবিজ্ঞানী মারে (Murray) ব্যক্তিত্ব মনোভাবের ওপর নির্ভর করে এ * অভীক্ষাটি প্রণীত হয়েছে। এ অভীক্ষাটি ব্যক্তিত্বের ১৫টি সংলক্ষণ পরিমাপ করে। এতে কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং বেশি বয়স্কদের জন্য পৃথক পৃথক আদর্শমান দেওয়া আছে। অভীক্ষা প্রয়োগের সময়সীমা ৪০-৫০ মিনিট এবং অভীক্ষাটির নির্ভরযোগ্যতার মান ০.৬০ থেকে ০.৮৭ এবং এর যথার্থতার মান খুব বেশি সন্তোষজনক নয়।
ঘ. গর্ডন ব্যক্তিত্ব অভীক্ষা : গর্ডনের ব্যক্তিত্ব অভীক্ষাটি দুটি ভাগে বিভক্ত। যথা : ১. গর্ডন ব্যক্তিগত প্রশ্নমালা ও ২. গর্ডন ব্যক্তিগত রেখাচিত্র।
ঙ. অভিক্ষেপণ পদ্ধতি : প্রক্ষেপণ পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মীর ব্যক্তিত্বকে পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা হয়। এতে অভীক্ষা মিথ্যা উত্তর দিতে পারে না। এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিকে এমন কতকগুলো সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হয়, সেগুলো অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট, অসংগঠিত এবং অসম্পূর্ণ। এ সমস্যাগুলো সমাধান করতে গিয়ে ব্যক্তি নিজের অজান্তে পরোক্ষভাবে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভাবাবেগ প্রভৃতি প্রকাশ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপযুক্ত কর্মে উপযুক্ত লোক নিয়োগের জন্য ব্যক্তিত্ব অভীক্ষার গুরুত্ব অতুলনীয়। সাম্প্রতিককালে কর্মের ব্যাপারে ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য্যের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে বিশেষ বিশেষ কর্মে সাফল্য অর্জনের জন্য এসব কর্মের উপযোগী মানসিক সংগঠন বা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোকের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য বলে প্রমাণ লাভ করেছে। তাই কোনো বিশেষ কর্মের জন্য কি ধরনের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোক উপযুক্ত তা নির্ধারণের জন্য ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করা আবশ্যক।