শঙ্করের দর্শন অনুসারে মায়াবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, শঙ্করের দর্শন অনুসারে মায়ার স্বরূপ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, শঙ্করের মায়াবাদ কী?
অথবা, মায়া সম্পর্কে শঙ্করের অভিমত কী?
অথবা, শঙ্করাচার্যের মতে মায়ার প্রকৃতি কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনে মায়া কথাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ভারতীয় দর্শনে মায়া শব্দটির একক কোন অর্থ নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। মায়া শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বেদে, উপনিষদে, ভগবদগীতা, ব্রহ্মসূত্রে, গৌড়বাদের দর্শনে, শঙ্করের দর্শনে মায়া কথাটির ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে মায়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
শঙ্করের দর্শনে মায়া : শঙ্করের মতে, মায়া ব্রহ্মেরই এক রকম শক্তি এবং এটি অবর্ণনীয়। ব্রহ্মের এ মায়া শক্তি জাদুকরের জাদুশক্তির মতো মানুষকে ভ্রান্তিতে ফেলতে পারে। জাদুকর যেমন তার জাদুশক্তির বলে এটি টাকাকে অনেক টাকা দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করতে পারে, তেমনি ব্রহ্মও তার মায়া শক্তির দ্বারা অজ্ঞ মানুষকে অসত্য জগৎকে সত্য বলে মনে করাতে পারে। শঙ্কর আরো বলেন, জাদুকর যেমন তার জাদুশক্তির দ্বারা অন্য জাদুকরকে প্রতারিত করতে পারে না এবং নিজেও প্রতারিত হন না তেমনি ব্রহ্মও তার মায়া শক্তির দ্বারা কোন তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তিকে ভ্রান্তিতে ফেলতে পারে না এবং নিজেও ভ্রান্তিতে পড়েন না। তত্ত্বজ্ঞানী শক্তি কেবল ব্রহ্মের সত্তা উপলব্ধি করেন, জগৎ এবং মিথ্যা মায়ার সত্তা উপলব্ধি করেন না। জাদুকর একটি টাকাকে বহু টাকা দেখাবার কারণ হলো তার জাদুশক্তি এবং মানুষের একটি টাকাকে বহু টাকা দেখিবার করাণ হলো অজ্ঞানতা। অনুরূপভাবে বলা যায়, ব্রহ্মের মায়া শক্তি জগৎ দেখায় আর সাধারণ মানুষ অজ্ঞ বলে তা দেখে। জাদুকর যেমন জানেন যে তার জাদুশক্তি ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয় তেমনি ব্রহ্মও জানেন যে তার মায়াশক্তি কিছুই নয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনে মায়া কথাটির একক কোন অর্থ নেই। ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে এ মায়া কথাটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।