অথবা, লিঙ্গভিত্তিক অসমতার জৈবিক বা প্রাকৃতিক কারণ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, লিঙ্গভিত্তিক অসমতার জৈবিক বা প্রাকৃতিক কারণসমূহ লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রকৃতিগতভাবেই নারী-পুরুষ অসম ভিত্তি নিয়ে জন্মগহণ করে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে নারী-পুরুষের জৈবিক পার্থক্য বিভিন্ন উপাদানে পরিলক্ষিত হয়।
লিঙ্গভিত্তিক অসমতার জৈবিক বা প্রাকৃতিক কারণ : নারী-পুরুষের মধ্যে এনাটোমিগতভাবে, জন্মগত ও বংশগতভাবে এবং হরমোনগতভাবে সম্পূর্ণ ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আর এসব পার্থক্যের কারণে পুরুষের পরিবর্তে নারীরা গর্ভধারণ করে সন্তান প্রসব করে এবং তাদের স্তন দান করে। এ কারণে পুরুষেরা নারীদের তুলনায় দৈহিক দিক দিয়ে নিজেদের সবল মনে করে। তবে এছাড়াও উচ্চতা, ওজন, দেহে লোমের পরিমাণ, দেহের চর্বি জাতীয় পদার্থের বণ্টন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারী- পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়, যা সামাজিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া নারী-পুরুষের দেহে ভিন্নধর্মী হরমোন বিরাজ করে। অর্থাৎ নারীর দেহে নারী হরমোন এবং পুরুষের দেহে পুরুষ হরমোন বিদ্যমান থাকে। কিন্তু কোন কারণে নারীর দেহে যদি পুরুষ হরমোন প্রবেশ করে, তাহলে তখন নারীর মধ্যে আক্রমণাত্মক স্বভাব ও যৌন তাড়না বৃদ্ধি করে। বস্তুত এ থেকে বুঝা যায়, নারী ও পুরুষের মধ্যে হরমোনগত পার্থক্য রয়েছে, যা তাদের আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে। অন্যদিকে, নারী-পুরুষের মধ্যে জৈবিক কারণে যে বৈষম্যের সৃষ্টি হয় তা তাদের সেক্স ক্রোমোজমের মধ্যে লক্ষ্য করা
যায়। যেমন- নারী দেহে একই ধরনের দুটি সেক্স ক্রোমোজোম তথা X, Y থাকে। অন্যদিকে, পুরুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন ক্রোমোজোম তথা X, Y লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতার উপর এর কি প্রভাব তা বিজ্ঞানীরা অদ্যাবধি তেমন একটি জানাতে পারে নি। তবে বিজ্ঞানিগণ বলেছেন যে, পুরুষের X ক্রোমোজোম কম থাকায় তারা দুর্বল এবং নারী শিশুর তুলনায় পুরুষ শিশুরাই অধিক সংখ্যায় মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়। এছাড়াও পুরুষের X ক্রোমোজোম কম থাকার কারণে তাদের মধ্যে ৩০টির বেশি বংশগত ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। এর একটি হলো শরীরের কোথাও কেটে গেলে সহসাই রক্ত জমাট বেঁধে বন্ধ হতে চায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, লিঙ্গভিত্তিক অসমতা বলতে নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক সম্পর্ককে বুঝায়। বস্তুত এর পিছনে জৈবিক কারণই বেশি দায়ী ।