অথবা, “গুপ্ত জিনিসের পক্ষে দুষ্ট হওয়া স্বাভাবিক।”— ব্যাখ্যা কর।
উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু সুসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : বাল্য ও বার্ধক্যকে আমাদের দেশে যে দৃষ্টিতে দেখা হয় তার সমালোচনা করে প্রবন্ধকার মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : আজকের দিনে আমাদের দেশে রাজনীতির ক্ষেত্রে একদিকে বালক, অন্যদিকে বৃদ্ধ; সাহিত্য ক্ষেত্রে একদিকে স্কুলবয়, অন্যদিকে স্কুলমাস্টার; সমাজে একদিকে বাল্যবিবাহ, অপরদিকে অকালমৃত্যু; ধর্মক্ষেত্রে একদিকে শুধু ইতি-ইতি, অপরদিকে কেবল নেতি নেতি। তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আমাদের জীবনগ্রন্থে ভূমিকা আছে, উপসংহার আছে, কিন্তু মাঝখানটা ফাঁকা। অথচ এ পৃথিবীর জীবনের আদি নেই, অন্ত নেই, আছে শুধু মধ্য। আর আমরা তারই অধিবাসী হয়েও আমাদের জীবনের আদি আছে, অন্ত আছে, নেই শুধু মধ্য। তাই বার্ধক্যকে বাল্যের পাশে এনে ফেললেও আমরা তার মিলন সাধন করতে পারিনি। কারণ ক্রিয়া বাদ দিয়ে দুটি পদকে জুড়ে এক করা যায় না। এছাড়া যা আছে তাকে অস্বীকার করলেই তা লুপ্ত হয় না। সুতরাং বাল্য ও বার্ধক্যের মধ্যখানে যে যৌবনের অবস্থান হাজারো চেষ্টা করেও তাকে অস্তিত্বহীন করা যাবে না। তার উপর জবরদস্তি করতে গেলেই সে যৌবন বিকৃতরূপে নানা ব্যক্তির দেহ অবলম্বন করে আপনার অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটাবে। কারণ রুদ্ধ ও বদ্ধ করে রাখলে পদার্থমাত্রই আলো বায়ুর সম্পর্ক হারিয়ে নিজেকে কলঙ্কিত করে তোলে। যৌবনের অবস্থাও তাই। যতই তাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে ততই সে বিকৃতভাবে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠবে। এ কথা চিরন্তন সত্য যে গুপ্ত জিনিসের পক্ষে দুষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। যা যত গুপ্ত তা ততই অন্ধকার।
মন্তব্য : যৌবনকে যতই অস্বীকার করার অপচেষ্টা চলবে তা ততই কলঙ্কিত হতে থাকবে।