উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘একরাত্রি’ গল্পে গল্পকথক তাঁর অতীত জীবনের কথা বলেছেন। তাঁর বাল্যসঙ্গী ছিল সুরবালা। সুরবালার প্রতি অন্যদের অপেক্ষা তার দাবি ছিল বেশি। কিন্তু তার ভুলের কারণে সে সুরবালাকে চিরতরে হারিয়েছেন তার জীবন থেকে। সে সংসারের বোঝা বহন করতে গিয়ে নওয়াখালি অঞ্চলের একটি স্কুলের সেকেন্ড মাস্টারির চাকরি গ্রহণ করে। নিঃসঙ্গ শূন্যমনে মানুষটির একা দিনকাটে স্কুলেরই একটা খোড়ো ঘরের আস্তানায়। ঘটনাচক্রে এই স্কুলের পাশেই আবার সহকারী উকিল রামলোচন বাবু তার ছোটবেলার বউ বউ খেলার সাথী সুরবালার সাথে বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত করছে। একদিন রামলোচন বাবুর বাসায় গিয়ে গল্প করতে করতে তার কানে এলো, পাশের ঘরে অত্যন্ত মৃদু, একটি চুড়ির টুংটাং, কাপড়ের একটু শব্দ এবং জানালার ফাঁকে দুটি চোখের কৌতূহলভরা দৃষ্টির অনুভূতি। গল্পের ভাষায় : “তৎক্ষণাৎ দুখানি চোখ আমার মনে পড়িয়া গেল- বিশ্বাস, সরলতা এবং শৈশবপ্রীতিতে ঢলঢল দুখানি বড়ো বড়ো চোখ, কালো কালো চোখের তারা, ঘনকৃষ্ণ পল্লব, স্থিরস্নিগ্ধ দৃষ্টি। সহসা হৃৎপিণ্ডকে কে যেন একটা কঠিন মুষ্টির দ্বারা চাপিয়া ধরিল এবং বেদনায় ভিতরটা টন্টন্ করিয়া উঠিল।” সেই হলো যন্ত্রণার আরম্ভ। স্কুলের সেই চালাঘরে, দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রৌদ্রে ঈষৎ উত্তপ্ত বাতাসে নিমগাছের পুষ্পমঞ্জরির সুগন্ধে অথবা সন্ধ্যায় পুষ্করিণীর ধারে সুপারি-নারিকেলের অর্থহীন মর্মরধ্বনি শুনতে শুনতে মনে হতো সুরবালাকে আজ চোখের দেখাও পাপ, সে আজ তার কেউ নয়- অথচ সামান্য ইচ্ছা করলেই সুরবালা তার কি না হতে পারতো।