রাত্রির অন্ধকারে সে কোথায় গেল কেহই জানিতে পারিল না বটে, কিন্তু দুপুর রাতে পেহ্লাদের ঘর জ্বলিয়া উঠিয়া বাগদীপাড়ায় বিষম হৈ চৈ বাঁধাইয়া দিল।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু মার্কসবাদী সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : এখানে ডাকাত সর্দার ভিখুর একটি দুর্ধর্ষ অমানবিক আচরণের ভয়ঙ্কর প্রতিফলন সম্পর্কে মন্তব্যটি করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : প্রাগৈতিহাসিক চরিত্রের ভিখু ডাকাতি করে জীবিকানির্বাহ করতো। একবার বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করতে গিয়ে সে একটা খুন করে এবং দলের আর সকলে ধরা পড়লেও কাঁধে একটা বর্শার খোঁচা খেয়ে সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর আহত ভিখু চিতলপুরের পেহ্লাদ বাগদীর কাছে গিয়ে আশ্রয় চাইলে পেহ্লাদ তাকে বাড়িতে না রেখে বনের মধ্যে মাঁচা বেঁধে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সেখানে অনাদরে অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় ভিখু মুমূর্ষু হয়ে পড়লে পেহ্লাদ তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এখানে অপেক্ষাকৃত আরামে থেকে ভিখু অল্পদিনেই সুস্থ হয়ে ওঠে। একটু সুস্থ হলেই তার মধ্যকার আদিম প্রবৃত্তি মাথা চাড়া দেয়। একদিন পেহ্লাদের বৌকে একা পেয়ে সে জড়িয়ে ধরে। পেহ্লাদ বাড়িতে এসে সব শুনে ভিখুর উপর ক্ষিপ্ত হয়। ভগ্নিপতি ভরতকে নিয়ে পেহ্লাদ তাকে বেদম মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। রাতের অন্ধকারে প্রহৃত ভিখু পেহ্লাদকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে কোথায় চলে যায় তা কেউ বুঝতে পারে না। কিন্তু গভীর রাতে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে পেহ্লাদের বাড়ি। বাগদীপাড়ায় বিষম হৈ চৈ বেঁধে যায়। এ অপকর্মের হোতা ভিখু ছাড়া আর কেউ নয়। সে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আগুন দিয়েছিল পেহ্লাদের ঘরে। অথচ পেহ্লাদই তাকে আশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিল। অকৃতজ্ঞ ভিখু উপকারীর উপকার স্বীকার না করে নির্দ্বিধায় অপকারে প্রবৃত্ত হলো।
মন্তব্য : অকৃতজ্ঞ ভিখুর চরিত্রে মনুষ্যত্বের কোন উপাদান ছিল না। তাই উপকারীর স্ত্রীর প্রতি হাত বাড়াতে এবং রাতের অন্ধকারে তার ঘরে আগুন দিতে ভিখুর বিবেকে এতটুকুও বাঁধেনি।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%88%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf/