“রাজা কোন অন্যায় করতে পারেনা। ” – ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকা:

“রাজা কোন অন্যায় করতে পারেনা” এই ধারণাটি রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি মৌলিক নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়, যা প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রচলিত ছিল। এর মূল তাৎপর্য হলো, রাজা বা শাসক নিজের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে অযাচিতভাবে অন্যায়, অবিচার বা অপব্যবহার করতে পারেন না। এই নীতি ছিল প্রতিষ্ঠিত আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে এবং জনগণের প্রতি রাজ্যের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি সচেতনতা প্রকাশ করে।

মূল উত্তর:

১. রাজ্য শাসনের আইনি নীতিমালা:
“রাজা কোন অন্যায় করতে পারেনা” কথাটির পিছনে যে মূল ধারণা কাজ করে, তা হলো রাজাকে আইনের প্রতি আনুগত্য এবং আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। প্রাচীন সময়ে রাজা ছিল সর্বোচ্চ শাসক, তবে তার ক্ষমতাও ছিল আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রাজাকে জনগণের ভালোর জন্য কাজ করতে এবং আইনের মধ্যে থেকে শাসন করতে বাধ্য করা হতো। রাজা নিজে আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারতেন না, অর্থাৎ, রাজাকে তার শাসনকে আইনের আওতায় আনতে হতো।

২. আইনগত দায়বদ্ধতা:
এই ধারণাটি বহন করে যে, রাজা তার অধীনে থাকা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। রাজা যদি অন্যায় বা অবিচার করেন, তবে তিনি তার শাসকগোষ্ঠী, জনগণ এবং রাজ্য আইনের বিরুদ্ধে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। এক্ষেত্রে, আইনের শাসন এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার জন্য রাজা ন্যায্যতা ও ধর্মপরায়ণতার দিকে মনোনিবেশ করতেন।

৩. সর্বশক্তিমান নয়, সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল:
যদিও প্রাচীন রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে গণ্য করা হত, তবুও “রাজা কোন অন্যায় করতে পারেনা” নীতির মাধ্যমে এটি বোঝানো হয় যে রাজা তার শক্তির প্রয়োগ করতে গিয়ে গণতান্ত্রিক বা নৈতিক সীমা অতিক্রম করতে পারেন না। রাজা কেবলমাত্র তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থে অন্যায় করার অধিকার তার ছিল না।

৪. রাজনৈতিক এবং নৈতিক দায়িত্ব:
“রাজা কোন অন্যায় করতে পারেনা” এই ধারণাটি রাজা বা শাসকের নৈতিক দায়বদ্ধতাকেও তুলে ধরে। রাজা বা শাসককে জনগণের মধ্যে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি যদি অন্যায় করেন, তবে তার শাসনব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে এবং জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ ও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে রাজাকে সর্বদা নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ থাকতে হয়।

৫. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:
প্রাচীনকালে অনেক রাজ্য ধর্মীয় নীতির ভিত্তিতেও পরিচালিত হত। রাজা বা শাসককে ধর্মীয় বিধি-বিধান অনুসরণ করতে বাধ্য করা হত, এবং ধর্মীয় আইন অনুযায়ী রাজা অন্যায় করতে পারতেন না। রাজাকে ধর্মীয় কর্তব্য পালনে এবং জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত থাকতে হতো।

উপসংহার:

“রাজা কোন অন্যায় করতে পারেনা” এই নীতি শুধুমাত্র একটি আইনি দৃষ্টিকোণ নয়, বরং এটি শাসকের নৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক দায়িত্বের প্রতীক। রাজা বা শাসক যদি তার ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে অন্যায় করেন, তবে তার শাসনব্যবস্থা অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে এবং জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে। এটি শাসকের শাসনকালে ন্যায়, সুশাসন এবং আইনের শাসনের মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে।