উত্তর ভূমিকা : ষোল শতকের বাংলার ইতিহাসে রাজমহলের যুদ্ধ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত এ যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসের মোড় পরিবর্তন করে দেয়। সম্রাট আকবরের সেনাপতি খান জাহান হোসেন কুলি খান এবং বাংলার সুলতান দাউদ খান কররানির মাঝে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয় এ যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার প্রায় ২৫০ বছরের স্থায়ী স্বাধীনতার পরিমসাপ্তি ঘটে।
→ রাজমহলের যুদ্ধ : কররানি বংশের শাসকগণ মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে বাংলায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। কিন্তু
দাউদ খান কররানি বাংলার সিংহাসনে আরোহণের পর সম্রাটের আনুগত্য অস্বীকার করে নিজ নামে খুৎবা পাঠ ও মুদ্রা প্রচলন
করেন। ফলে দাউদের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে সম্রাট আকবর ১৫৭৪ সালের ৩ আগস্ট বাংলা অবরোধ করে দাউদের হাজিপুর ও
■ পাটনা দুর্গ অধিকার করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর সম্রাটের সেনাপতি মুনিম খান বাংলার রাজধানী তান্ডা দখল করেন। তখন দাউদ
কারাইয়ের যুদ্ধে মুনিম খানের নিকট পরাজিত হয়ে কটকের সন্ধি করতে বাধ্য হন। ২৩ অক্টোবর মুনিম খান মৃত্যুবরণ করলে দাউদ খান আবার সন্ধি ভঙ্গ করে বিদ্রোহী হয়ে উঠেন এবং বঙ্গে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। খান-ই-জাহান এসময় বাংলার
সুবাদার ও রাজা টোড়রমলের সহকারী সুবাদার হিসেবে বঙ্গে আগমন করলে দাউদ রাজমহলে আশ্রয় নেন। টোড়রমল ও
খান-ই-জাহান সন্ধি বঙ্গের অপরাধে রাজমহলে অভিযান চালান। ফলে ১৫৭৬ সালের ১০ জুলাই রাজমহলে দাউদের সাথে মুঘল বাহিনীর এক মীমাংসাত্মক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ ভীষণ রক্তক্ষর্থ যুদ্ধে মুঘল বাহিনী দাউদের বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম
হয়। সেনাপতি জুনায়েদ কররানি নিহত হলে দাউদ পরাজয় অবশ্যম্ভাবী ভেবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেন। ইতিহাসে এটিই রাজমহলের যুদ্ধ নামে পরিচিত।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, রাজমহলের যুদ্ধে দাউদের পরাজয়ের ফলে প্রায় ২৫০ বছর স্থায়ী স্বাধীন বাংলা রাজ্যের পরিসমাপ্তি ঘটে। সমগ্র বাংলা ও বিহার সম্রাট আকবরের করতলগড হয়। যদিও বার ভূঁইয়াদের প্রভাবের কারণে খান-ই- জাহান বাংলায় মুঘল শাসনের যে ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় তার ভিত্তিতে সম্রাট জাহাঙ্গীর বাংলা জয় করেছিলেন।