রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলতে কী বুঝ?

অথবা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কাকে বলে?
অথবা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কী?
অথবা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানে যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তার মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান অন্যতম। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বৃহত্তর সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক আচার আচরণ, গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্য, আমলাতন্ত্র, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা না থাকলে সমাজতাত্ত্বিক আলোচনায় মজবুত ভিত্তি গড়ে উঠে না। এগুলো সবই সমাজের অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ।
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান : রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলতে এমন কতকগুলো পন্থা ও পদ্ধতিকে বুঝায়, যেগুলো সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। সমাজে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাষ্ট্র, সরকার, আমলাতন্ত্র, গণতন্ত্র প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সমাজবিজ্ঞানী সামনার ও কেলারের মতে, সামাজিক সংগঠনের জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা সকল সমাজের পক্ষেই অপরিহার্য। সেজন্য সকল সমাজেই কোন না কোন প্রকারের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আছে, যার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক ও স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে। মানবসমাজের শুরুতে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছিল। কালক্রমে ধীরে ধীরে তা একটা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এদিক দিয়ে রাষ্ট্রকে একটা সর্বজনীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা যায়। রাষ্ট্র হলো
সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। সমাজবিজ্ঞানীরা গোটা সমাজের সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের বিষয়াবলি তথা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করে। মূলত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে জানার ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানী একে অন্যকে তথ্য বিনিময় দ্বারা সাহায্য করেছে। বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ধারণা আদিম সমাজের ধারণা থেকে লাভ করা যায়। ইতিহাস অধ্যয়নে দেখা যায় আদিম সমাজের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অপেক্ষা বর্তমান সভ্য ও অগ্রসর সমাজের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অধিকতর উন্নত। অন্যদিকে, কোন কোন আদিম সমাজেও বেশ উন্নত স্তরের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দেখা যেত। আফ্রিকায় কোন কোন
উপজাতির মধ্যে আধুনিক সভ্য সমাজের মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ছিল। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু সম্প্রদায়ের কথা বলা যায় ৷ জুলু সম্প্রদায়ের এমন এক ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল, যাকে একটি ক্ষুদ্র সাম্রাজ্য বললেও ভুল হবে না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য কতকগুলো সাধারণ উদ্দেশ্য পূরণ করতে চায়। তাই তারা গোষ্ঠীবদ্ধ হয় এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘ, সমিতি, রাষ্ট্র, সরকার তথা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান অন্যতম।