রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫টি সাফল্য তুলে ধর।

অথবা, রাজনীতিবিদ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাফল্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশে এবং বাংলাদেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য যিনি সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেসব নেতৃবৃন্দ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে মাতৃভূমিকে ঔপনিবেশিক শাসন হতে মুক্ত করে একটি নতুন জাতির জন্ম দেন তাঁদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যতম।
নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাফল্য : নিচে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৫টি সাফল্য তুলে ধরা হলো :
১. আপসহীন নেতৃত্ব : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বঞ্চিত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আপসহীনভাবে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। অন্যায়ের কাছে তিনি কোনো অবস্থাতেই মাথানত করেননি। জেল, জুলুম, অত্যাচার, কোনোকিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
২. জাতীয় নেতায় পরিণত হওয়া : ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঐতিহাসিক ছয়দফা প্রস্তাব ছিল বাঙালি জাতীয় মুক্তির সনদ। এ ছয়দফাকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। আর এ কারণেই শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করে। কিন্তু বাঙালিরা পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলেই ছয়দফার সপক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়।
৩. ছয়দফা কর্মসূচি : আইয়ুব খানের শাসনামলে শোষণ ও বঞ্চনার জাঁতাকলে নিষ্পেষিত পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা যখন মুক্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে ঠিক সে সময় শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে
১৯৬৬ সালে তাঁর ঐতিহাসিক ছয়দফা দাবি নিয়ে এগিয়ে আসেন। তাঁর নেতৃত্বে ও নির্দেশে ছয়দফা দাবি দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র প্রচার করা হয়।
৪. সফল রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের দ্বারা আইয়ুব সরকারের মতো লৌহমানবের যবনিকাপাত ঘটে। আইয়ুব সরকারের পতনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নব দিগন্তের সূচনা করেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কঠোর ভূমিকা পালন করে যা তাঁকে সফল রাজনীতিবিদে পরিণত করে।
৫. ১৯৭০ সালের নির্বাচন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী শক্তিসুলভ নেতৃত্বের আর একটি পরিচয় পাওয়া যায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে। ইয়াহিয়া সামরিক আইনের মধ্যে নির্বাচন দেন এবং নির্বাচনে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে। নির্বাচনে এটাই প্রমাণিত হয় যে, পাকিস্তানে একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই ছিলেন সম্মোহনী শক্তিসুলভ নেতৃত্বের অধিকারী।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু একটি নাম একটি কিংবদন্তি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে এ মহান নেতার হাত ধরে। বিশ্বের ইতিহাসে এরূপ দৃষ্টান্ত বিরল। আর তাই বলা যায়, রাজনীতিবিদ হিসেবে
বঙ্গবন্ধু সর্বাপেক্ষা সফল ছিলেন।