অথবা, রাজনৈতিক আলোচনায় কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষণে যেসব তত্ত্ব ব্যবহৃত হয় কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব তার মধ্যে অন্যতম। কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব বেশ জনপ্রিয় ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ তত্ত্ব একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোন কার্য, কোন কাঠামো দ্বারা সম্পাদিত হয় তার ভিত্তিতে রাজনীতি ব্যাখ্যা করে এবং তুলনামূলক অধ্যয়ন করার চেষ্টা করে। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্স সর্বপ্রথম এ তত্ত্বের উদ্ভব ঘটালেও
১৯৬০ সালে অ্যালমন্ড ও কোলম্যান সম্পাদিত ‘The Politics of the Developing Areas’ গ্রন্থটি এ তত্ত্বের বিকাশের মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণে কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (Importance and necessity in structural functionalism theory in political explanation) : বিশ্বের যে কোন দেশের রাজনৈতিক অগ্রগতির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে ও অধ্যয়নের জন্য কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব অত্যন্ত উপযোগী। নিম্নে সংক্ষেপে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. তুলনামূলক বিশ্লেষণ : রাজনীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণে এ কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব খুবই উপযোগী। অ্যালমন্ড পাশ্চাত্যের সাথে প্রাচ্যের সমাজ ও রাজনীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত উপায় ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। ফলে রাজনীতি বিশ্লেষণে এ তত্ত্ব সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।
২. ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান : কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম। যেহেতু এটা বিভিন্ন সামাজিক উপাদানের প্রেক্ষিতে রাজনীতি অধ্যয়ন করে। কাজেই ইনপুট ও আউটপুটের ক্ষেত্রে কখন কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে এ ব্যাপারে দক্ষতার সাথে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে।
৩. সমাজতান্ত্রিক ব্যাখ্যা : কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব রাজনীতির সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। এ তত্ত্ব ইনপুট ও আউটপুটের সমাজতান্ত্রিক ব্যাখ্যা থেকে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উপনীত হয়েছে। তাছাড়া এ তত্ত্ব একটি সমাজের সামগ্রিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে রাজনীতি ব্যাখ্যা করে।
৪. পরিবর্তন ও স্থিতিশীলতার বিশ্লেষণ : কাঠামো কার্যগত তত্ত্বে একদিকে যেমন পরিবর্তন অন্যদিকে তেমনি স্থিতিশীলতা ও ব্যবস্থার সংরক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করে। তাছাড়া একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তনশীল পরিবেশের মধ্যে কিভাবে টিকে থাকে তা এ তত্ত্বে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
৫. ভিন্নাঙ্গিকে রাজনীতিকে ব্যাখ্যা : অ্যালমন্ড কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের সাহায্যে সম্পূর্ণ ভিন্নাঙ্গিকে রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি নতুন শব্দ, ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, এর ফলে নতুন আঙ্গিকে রাজনীতির বাস্তবভিত্তিক ব্যাখ্যা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতি বিশ্লেষণে এ তত্ত্ব সফলতার সাথে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।
৬. পরিমাপযোগ্য ও প্রয়োগযোগ্য : কাঠামো ও কার্যের মাধ্যমে অ্যালমন্ড রাজনীতির যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন তা পরিমাপযোগ্য ও প্রয়োগযোগ্য। সাধারণত কাঠামোসমূহের দক্ষতা, রূপান্তর প্রক্রিয়ার দক্ষতা এবং ব্যবস্থা সংরক্ষণ ও অভিযোজনের দক্ষতা পরিমাপযোগ্য। এজন্য এ তত্ত্ব রাজনীতি অধ্যয়নে প্রয়োগযোগ্য।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সৃষ্ট তত্ত্বসমূহের মধ্যে কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব অন্যতম। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক থেকে বর্তমান অবধি রাজনীতির তুলনামূলক অধ্যয়নের ক্ষেত্রে এ তত্ত্ব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। সুতরাং বলা যায় কাঠামো কার্যগত তত্ত্বের গুরুত্ব অপরিহার্য।