উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিরচিত ‘বাঙ্গালা ভাষা’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : বাংলা ভাষার উৎকৃষ্ট রচনারীতি সম্পর্কে অভিমত প্রদান করতে গিয়ে লেখক এ মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : উনিশ শতকের প্রথমদিকে যখন বাংলা গদ্য রচনা শুরু হয় তখন এর রীতি আদর্শ কী হবে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ও মতভেদ দেখা দেয়। সংস্কৃত অনুসারী পণ্ডিতরা মনে করতেন সংস্কৃত ভাষা ও শব্দের উপর ভিত্তি করে বাংলা গদ্য রচিত হোক। এঁরা সংস্কৃত শব্দ ভিন্ন অন্য কোন শব্দকে বাংলা ভাষায় গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না। অন্যদিকে, ইংরেজি শিক্ষিত নব্যপন্থি পণ্ডিতরা এ মতবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁরা বাংলা ভাষা থেকে সমুদয় সংস্কৃত শব্দ ঝেটিয়ে বিদায় করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন। উনিশ শতকের মধ্যভাগে যখন এ বিতর্ক তুঙ্গে তখন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষার রীতি আদর্শ সম্পর্কে কোন পক্ষে যোগ না দিয়ে তৃতীয় অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি উভয়পন্থিদের সমন্বয় সাধন করে উৎকৃষ্ট বাংলা গদ্যের পথনির্দেশ প্রদান করেন। বঙ্কিমচন্দ্র নির্বিচারে সংস্কৃত শব্দ বর্জনের বিরোধিতা করে এবং প্রয়োজনমতো আঞ্চলিক ও বিদেশি শব্দ গ্রহণের পক্ষে অভিমত দেন। মনের কথা প্রকাশ করার জন্য যেখানে যে শব্দের প্রয়োজন সে শব্দ গ্রহণ করা উচিত বলে তিনি এ বিতর্কের সমাধানে এগিয়ে আসেন। তাঁর মতে রচনার ভাষা বিষয় অনুসারে হওয়া উচিত। যে রচনা সবাই বুঝতে পারে এবং পড়ার সাথে সাথে যার অর্থ বুঝা যায় তা-ই সর্বোৎকৃষ্ট রচনা। এক্ষেত্রে দেশি, বিদেশি, সংস্কৃত, আঞ্চলিক কোন শব্দেরই বর্জন অনুচিত। অর্থগৌরব থাকলেই রচনা উৎকৃষ্টতা অর্জনে সক্ষম।
মন্তব্য : সরল ও অর্থসমৃদ্ধ শব্দের দ্বারা ভাষা নির্মিত হলে রচনার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পায়।