উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু সুসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : উপমহাদেশের মানুষেরা যৌবনকে কেন ভয় পায় তার কারণ সম্পর্কে প্রাবন্ধিক উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : আমাদের দেশের মানুষ কোনদিনই যৌবনকে ভালো চোখে দেখে না। আমাদের প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে যৌবনকে দেখানো হয়েছে ভোগের বস্তু হিসেবে। যৌবন যে অপরিমেয় শক্তির উৎস তা আমরা স্বীকার করতে ভয় পাই। আর এ কারণেই যৌবনের কপালে রাজটিকা পরানোর চেয়ে বরং পৃষ্ঠে রাজদণ্ড প্রয়োগ করতে আমরা বেশি উৎসাহী। এদেশের মানুষ মনে করে মানবজীবনে যৌবন একটা মস্তবড় ফাঁড়া। এ সময় মানুষ শক্তির আবেগে উন্মত্ত হয়ে উঠে বলে একে আমরা ভয় পাই। তাই সকলে চায় বাল্য থেকে এক লাফে যৌবনটাকে পেরিয়ে বার্ধক্যে পৌছাতে। আমাদের সমাজ শক্তি ও বীরত্বকে ভয় করে। বালকের মনে শক্তি নেই, বৃদ্ধের মনে জোর ও প্রাণ নেই। সুতরাং সমাজের জন্য এরা নিরাপদ। কিন্তু যুবকের মনে সাহস ও শক্তি উভয়ই আছে। সে সমাজ থেকে অন্যায়, দুর্নীতি, অনাচার দূর করে পুরাতনের সব জঞ্জাল দূর করে নতুন করে সমাজকে গড়তে চায়। এ কারণে আমরা তাকে ভয় পাই। আমরা শক্তির পূজারী নই বলেই আমাদের মধ্যে এ পশ্চাৎপদতা বিরাজ করে।
মন্তব্য : আমরা দুর্বল বলেই শক্তির আধার যৌবনকে ভয় পাই। আর এ কারণেই আমাদের দেশে যৌবনের মূল্যায়ন হয় না।