অথবা, যোগদর্শনে ধ্যান কী?
অথবা, ধ্যান ব্যাখ্যা কর।
অথবা, যোগ অষ্ট অঙ্গের ধ্যান ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মহর্ষি পতঞ্জলি ‘যোগদর্শনের’ প্রবর্তক এবং প্রতিষ্ঠাতা। পতঞ্জলির নামানুসারে ‘যোগদর্শনকে’ পাতঞ্জলদর্শনও বলা হয়। যোগদর্শনের আদিম গ্রন্থ হলো ‘যোগসূত্র’ বা ‘পাতঞ্জল সূত্র’। বেদব্যাস রচিত ‘যোগভাষ্য’ যোগসূত্রের একটি মূল্যবান ভাষ্য। যোগদর্শনে আত্মোপলব্ধির জন্য অষ্ট অঙ্গের উদ্ভব হয়েছে। যোগদর্শন মতে আত্মার
উপলব্ধিই মুক্তির কারণ। কিন্তু আত্মোপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন শুদ্ধ, স্থির ও শান্ত চিত্তের। চিত্তকে শুদ্ধ ও শান্ত করার জন্য যোগদর্শনে অষ্টবিধ অনুশীলনের উপদেশ দেয়া হয়েছে। যথা : ১. যম, ২. নিয়ম, ৩. আসন, ৪. প্রাণায়াম, ৫. প্রত্যাহার, ৬. ধারণা, ৭. ধ্যান ও ৮. সমাধি।
যোগের অষ্ট অঙ্গ হিসেবে ধ্যান : যে বিষয়ে চিত্ত বিনষ্ট হয়, সে বিষয়ে যদি চিত্তের একতানতা জন্মায় তাহলে তাকে ধ্যান বলে। একতানতার অর্থ অবিরতভাবে চিন্তা করতে থাকা। এ অবস্থায় বস্তুর জ্ঞান নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহাকারে চলতে থাকে।তৈলধারা আর বিন্দু বিন্দু জলের ধারা এ দুই উপমার সাহায্যে ধারণা ও ধ্যানের পার্থক্য দেখান যেতে পারে।
ধারণার প্রত্যয় বিন্দু বিন্দু জলের ধারার মতো আর ধ্যানের প্রত্যয় তৈল ধারার মতো। জলবিন্দু ধারার মধ্যে প্রবাহ লক্ষ করা গেলেও জলবিন্দুগুলো বিভিন্ন বা পৃথক। কিন্তু তৈল ধারার মধ্যে প্রবাহের অবিচ্ছিন্নতা লক্ষ করা যায়। একই বিষয় সম্পর্কে চিন্তা হলেও ধারণার ক্ষেত্রে খণ্ড খণ্ড জ্ঞানের আবির্ভাব ঘটে। আর ধ্যানের ক্ষেত্রে জ্ঞানের বিষয় অবিরত ধারায় অবিচ্ছিন্ন প্রবাহের মতো চলতে থাকে। এর ফলে প্রথমত, ধ্যেয় বিষয়ে খুঁটিনাটি জ্ঞান জন্মায় এবং পরে ধ্যেয় বিষয় একটি সামগ্রিক জীবন্ত সত্তারূপে প্রতীয়মান হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যোগ সাধনার বিভিন্ন স্তরে যোগী বিভিন্ন অলৌকিক শক্তি লাভ করেন। যোগদর্শন মতে সিদ্ধি লাভ যোগ সাধনার চরম লক্ষ্য নয়; আত্মজ্ঞান বা মুক্তি লাভই যোগ সাধনার প্রকৃত উদ্দেশ্য। সুতরাং আত্মজ্ঞান বা মুক্তি লাভ না হওয়া পর্যন্ত যোগীকে নীরব সাধনা করে যেতে হবে। সিদ্ধির প্রলোভনে প্রলুব্ধ হলে যোগী
যোগভ্রষ্ট হবে এবং মুক্তি লাভে বঞ্চিত হবে। এ যোগশাস্ত্রকারেরা সিদ্ধির প্রলোভনে প্রলুব্ধ না হয়ে মুক্তির সাধনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন