অথবা, যোগানের পরিমাণ কি কি বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
উত্তর : ভূমিকা : দাম ও যোগানের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত ধরে কোন দ্রব্যের যোগান ঐ দ্রব্যের দামের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ দাম বাড়লে যোগান বাড়ে, দাম কমলে যোগান কমে। দ্রব্যের যোগান শুধুমাত্র দামের উপর নির্ভর না করে অন্যান্য উপাদানের উপর নির্ভর করে। এসব উপাদানই হচ্ছে যোগানের নির্ধারক।
নিম্নে যোগানের নির্ধারকসমূহ আলোচনা করা হল:
১. দ্রব্যের নিজস্ব দামঃ কোন দ্রব্যের নিজ দামের উপর যোগান অধিকাংশে নির্ভর করে। সাধারণত দ্রব্যের দাম বেশি হলে যোগান বাড়ে এবং দ্রব্যের দাম কম হলে যোগান কমে।।
২. চাহিদার পরিবর্তনঃ চাহিদার পরিবর্তন হলে যোগানেরও পরিবর্তন হয়। কোন দ্রব্যের চাহিদা বাড়লে বিক্রেতা অধিক যোগান দিতে উৎসাহী হবে। আবার চাহিদা কমলে কম যোগান দিবে।
৩. উৎপাদনের উপকরণের দাম: উৎপাদনের উপকরণের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়ে। ফলে একই দামে আগের চেয়ে কম যোগান দেয়া সম্ভব হয়।
৪. কর ও ভর্তুকি: দ্রব্যের বিক্রয়ের উপর করারোপ করা হলে তার দাম বাড়ে। ফলে চাহিদা কমে যায়। এ অবস্থায় যোগন কম হয়। আবার ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কমালে তার যোগান বাড়ে।
৫. কারিগরি কৌশল: নতুন কারিগরি কৌশল ও উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কমে। ফলে একই দামে আগের চাইতে বেশি যোগান দেওয়া সম্ভব হয়।
৬. দ্রব্যের প্রকৃতিঃ পুনরায় উৎপাদিত দ্রব্যের যোগান পরিবর্তন করা যায়। পুনরায় উৎপাদন করা যায় না এমন দ্রব্যের যোগান সম্পূর্ন অস্থিতিস্থাপক হয়।
৭. আবহাওয়ার প্রভাব: আবহাওয়ার প্রভাবের উপর কৃষিজাত দ্রব্যের যোগান বিষেশভাবে নির্ভরশীল। অনুকুল আবহাওয়ায় কৃবিজাত দ্রব্যের যোগান বাড়ে এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন কমে ফলে যোগান কমে।
৮. সময়ঃ সময় যোগানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। স্বল্পমেয়াদে দাম পরিবর্তন হলেও রাতারাতি যোগানের পরিবর্তন সম্ভব হয় না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে দামের পরিবর্তনের সাথে সাথে যোগানের পরিবর্তন ঘটে।
৯. বাজারের বিভিন্নাতাঃ যে বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ বেশী, সে বাজারে দ্রব্যের যোগান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয়। যে বাজারে ক্রয় বিক্রয়ের পরিমাণ কম, সে বাজারে দ্রব্যের যোগান হ্রাস করা হয়।
১০. বিকল্প দ্রব্যের দামের পরিবর্তন: কোন দ্রব্যের বিকল্প দ্রব্যের দাম কমলে সে দ্রব্যের যোগান বাড়ে। কারণ যে দ্রব্যের দাম কমে, উৎপাদনকারীগণ সেই দ্রব্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
১১. যুক্ত যোগানঃ যে সকল দ্রব্য যুক্তভাবে উৎপাদিত হয়, ঐ সকল দ্রব্যের একটির যোগন বাড়লে অপরটির যোগানও বাড়ে।
১২. মুনাফাঃ সর্বাধিক মুনাফার লোভে উৎপাদনকারী বিশেষ দ্রব্য অধিক পরিমানে উৎপাদন ও যোগানে নিয়োজিত হয়। উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে আমরা বলতে পারি দাম ছাড়া আরও বিভন্ন উপাদানের প্রভাবে যোগান এর হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। সাধারণত উক্ত উপাদানগুলোর যোগান এর সহায়ক হলে যোগান বৃদ্ধি পায় আর বিপরীত হলে যোগান হ্রাস পায়।