উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু খ্যাতিমান সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বাঙ্গালা ভাষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : কোন ভাষায় বাংলা পুস্তক রচিত হওয়া উচিত তার দিকনির্দেশ করে প্রবন্ধকার উক্তিটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : গ্রন্থের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান ও শিক্ষার কথা প্রচার করা। পাঠক বই পড়ে জ্ঞান ও শিক্ষা লাভ করে। অন্ধ ও অশিক্ষিত মানুষের মনে জ্ঞানের আলো জ্বালানোর মহৎ লক্ষ্য নিয়ে লেখকরা পুস্তক রচনা করেন। সুতরাং গ্রন্থ প্রণয়নের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো পরোপকার করা। এ উদ্দেশ্য তখনই সার্থক হবে যখন পাঠকরা পুস্তকটি পাঠ করে সহজেই তার অর্থ বুঝতে পারবে। পুস্তক পাঠ করে পাঠক যদি কিছুই বুঝতে না পারে তবে পুস্তক রচনার কোন সার্থকতা নেই। এ ব্যর্থতা থেকে লেখক তখনই রক্ষা পান, যখন তিনি পুস্তকের বর্ণিত বিষয়কে সহজ, সরল ও বোধগম্য ভাষায় প্রকাশ করতে সক্ষম হন। যে ভাষা অধিকাংশ মানুষ বুঝে না, কেবল স্বল্প সংখ্যক মানুষ বুঝে সে ভাষায় গ্রন্থ রচনা অনুচিত। এতে দু’চারজন জ্ঞানী উপকৃত হলেও অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত হয়। কিন্তু জ্ঞানলাভের অধিকার সকলেরই সমান। কঠিন ও দুর্বোধ্য ভাষায় গ্রন্থ রচিত হলে অল্প শিক্ষিত বিশাল জনগোষ্ঠীকে পাঠের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হবে। এতে গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র মনে করেন, বাংলা ভাষা কারো একার সম্পত্তি নয়। ভাষায় সকলের সমান অধিকার আছে। সুতরাং গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে যা অধিকাংশ লোকের বোধগম্য। দুর্বোধ্য ভাষা সকল ক্ষেত্রেই পরিহার করতে হবে। অন্যথায় গ্রন্থ প্রণয়নের উদ্দেশ্য সফলকাম হবে না।
মন্তব্য : পুস্তকের ভাষা সহজ, সরল ও সর্বজনবোধ্য হওয়া একান্ত কর্তব্য। দুর্বোধ্য ভাষা একান্তই বর্জনীয়।