উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী বিরচিত ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : নীতিবাদীদের সংযম সংক্রান্ত ধারণা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রাবন্ধিক উল্লিখিত মূল্যবান মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : ধর্মের সাথে সংস্কৃতির পার্থক্য রয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই । সংস্কৃতি মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি যোগান দেয়। আর ধর্ম বাইরে থেকে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। নীতিবাদী ধার্মিকেরা মানুষকে সংযম শিক্ষা করতে বলেছেন, অথচ কোন বড়m জিনিসের দিকে তাকিয়ে তা করতে হবে তার দিকনির্দেশ দিতে পারলেন না। তাঁরা কেবল স্বর্গের দিকে ইঙ্গিত করলেন। আর সে সাথে স্বর্গের যে চিত্রটি আঁকা হলো সেখানে তা ভয়ঙ্কর বলেই মনে হলো; ফলে সে ইন্দ্রিয় বিলাসেরই জয় হলো। অর্থাৎ স্বর্গের যেসব ভোগ্য জিনিসের লোভ দেখানো হয়েছে তা ইন্দ্রিয় বিলাসের উপকরণ ছাড়া কিছু নয়। তাই ইন্দ্রিয় ভীতি থাকা সত্ত্বেও মানুষ ইন্দ্ৰিয় সর্বস্বতার দিকে ঝুঁকল, মুক্তির নিশ্বাস ফেলবার মতো বড় কিছুর আশ্রয়ের সন্ধান পেল না। নীতিবিদদের জানা উচিত ছিল, সংযম বলে কোন স্বাস্থ্য প্রদায়ী বস্তু নেই, আছে বড় কোন কিছুর জন্য প্রতীক্ষা। আর সে বড় জিনিসটাই হলো প্রেম। যে প্রেমে পড়েছে অথবা প্রেমের মূল্য উপলব্ধি করেছে সে-ই প্রতীক্ষা করতে শিখেছে। অর্থাৎ সে সহজে সংযমী হতে শিখেছে। এছাড়া অপরের পক্ষে সংযম মানে পীড়ন। আর এ পীড়ন হচ্ছে নিষ্ঠুরতার জনক। যে মানুষ বিনা কারণে নিজেকে দুঃখ দেয়, অপরকে দুঃখ দিতে তার তিলমাত্রও বাধে না। এ দুঃখ দেওয়াটাই নিষ্ঠুরতা যার থেকে জন্ম নেয় পীড়ন। নীতিবিদেরা পীড়ন ও আত্মপীড়নের সমর্থক।
মন্তব্য: নিজেকে বিনা কারণে যে দুঃখ দেয় তার পক্ষেই সম্ভব অন্যকে দুঃখ দেয়া।