উৎস : আলোচ্য অংশটুকু খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘নয়নচারা’ শীর্ষক গল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : বানভাসি একদল মানুষের সাথে শহরে আসা আমুর মনে শহরের প্রতি যে বিরূপতা জন্ম নিয়েছিল তা আলোচ্য বাক্যে প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্লেষণ : দুর্যোগকবলিত আমুরা শহরে এসেছে বাঁচার জন্য। কিন্তু শহরের মানুষেরা বড় নিষ্ঠুর, তারা এদেরকে মানুষ বলেই গণ্য করে না। শহরের এ নির্দয় পরিবেশ আমুর মনকে পীড়া দেয়। একদিন রাতে নদীর মতো প্রশস্ত শহরের রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আমু বিস্মিত দৃষ্টিতে একটি লোককে আসতে দেখে। লোকটির মধ্যে মনে হলো শয়তানের চোখ জ্বলছে, যে চোখ হীনতায় ক্ষুদ্রতম এবং ক্রোধে রক্তবর্ণ। শয়তানরূপী এ মানুষটাকে দেখে আমুর বিস্ময় লাগে। ঘন অন্ধকারের মধ্যে আমুর চোখ ঠিকরে যেন আগুন বেরোয়। অকুতোভয় হয়ে আমু লোকটার সাথে বোঝাপড়ার জন্য প্রস্তুত হয়। এছাড়া রাস্তার পাশের একটা বাড়ির জানালার ফাঁক গলিয়ে উজ্জ্বল ও সরু এক টুকরো আলো দুলতে থাকে। আমুর মনে হয় ঐ লোকটা এবং এ আলোটা হাসছে। আমুরা যখন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কঁকায় তখন এ ধরনের লোক ও পরিবেশ দুনিয়ার কোন অজানা কথা নিয়ে হাসে। আমু এ উপহাসের হাসি সহ্য করতে পারে না। তার মনে হয় আলোককণা যখন হাসে তখন তার পিছনে কালো শয়তানেরাও বিদ্রূপের হাসি হাসে। আমু ভাবে, এরা যত পারে অন্য জায়গায় গিয়ে হাসুক। কিন্তু যেখানে তাদের মতো অসহায় মানুষ পড়ে পড়ে মরছে, যারা নিজেদের গ্রামে যাবে বলে অপেক্ষা করছে সে জায়গায় এ উপহাসের হাসি সে হাসতে দেবে না। শহরের প্রতি এ বিরূপতা আমুকে কুঁরে কুঁরে খেয়েছে।
মন্তব্য: শহরের মানুষের আচার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে আমু এমন ভাবনা ভাবতে বাধ্য হয়েছে।