উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : আমাদের দেশে যৌবনকে কৈশোরে টেনে আনার যে অপচেষ্টা চলে সে সম্পর্কে প্রাবন্ধিক উক্তিটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : সংস্কৃত সাহিত্যের যযাতিকাঙ্ক্ষিত যৌবনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ এই যে, তা অনিত্য ও ক্ষণস্থায়ী। এ ব্যাপারে এদেশের কাব্য ও সংগীত পরিপূর্ণ।
“ফাগুন গয়ী হয়, বহুরা ফিরি আয়ী হয়
গয়ে রে যৌবন ফিরি আওত নাহি।”
এ গান আজও হিন্দুস্থানের পথেঘাটে করুণ সুরে গাওয়া হয়ে থাকে। যৌবন যে চিরদিন থাকে না এ আপসোস রাখার স্থান ভারতবর্ষীয়দের নেই। সুতরাং যা অতি প্রিয় এবং ক্ষণস্থায়ী তার স্থায়িত্ব বাড়াবার চেষ্টা মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক। যৌবনকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যেই হয়তো একদিন একে পিছনে টেনে এনে কৈশোরের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নিজের স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্যই যৌবন শৈশবের উপর আক্রমণ করেছিল। প্রাচীনকালের বাল্যবিবাহ বা গৌরীদানের মূলে হয়তো যৌবনের এ মেয়াদ বাড়ানোর ইচ্ছেটাই প্রবল। এখানে এ কথা বলা সঙ্গত যে জীবনের গতিটি উল্টো দিকে ফিরাবার ভিতরেও একটা মহা আর্ট আছে। যেমন পৃথিবীর সকল দেশের লোকে গাছকে কি করে বড় করতে হয় তাই জানে, কিন্তু গাছকে কি করে ছোট করতে হয় তা কেবল জাপানিরাই জানে। জাপানিদের মতো কেবল ভারতীয়রাই যৌবনকে পিছনের দিকে টেনে নিতে চেয়েছে। কিন্তু তাতে যৌবনের অপচয় ও অপব্যবহার ছাড়া আর কিছু হয়নি। হয়তো এ উল্টো হাঁটার মধ্যে যে আর্ট আছে তা ভারতীয়রা উপভোগ করতে পছন্দ করে ৷ যৌবনকে ভোগের সামগ্রী মনে করা হতো বলেই তার স্থায়িত্ব বাড়াতে এত আগ্রহ ছিল।
মন্তব্য : মানুষকে মরতে হবে। কিন্তু মরণের পরও সে বেঁচে থাকতে চায়। তার আত্মা অমর ও অব্যয়। এই আত্মার মধ্যে মানুষ বেঁচে থাকবে।