উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু প্রখ্যাত সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিরচিত ‘বাঙ্গালা ভাষা’ প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : সাহিত্য রচনার ভাব-সৌন্দর্যের ব্যাপারে প্রাবন্ধিক তাঁর অভিমত আলোচ্য বাক্যে তুলে ধরেছেন।
বিশ্লেষণ : রচনার প্রধান গুণ এবং প্রথম প্রয়োজন সরলতা ও স্পষ্টতা। যে রচনা সকলেই বুঝতে পারে এবং পড়ামাত্রই যার অর্থ বোধগম্য হয় তাই সর্বোৎকৃষ্ট রচনা। ভাষার সরলতা ও স্পষ্টতার সাথে সৌন্দর্য থাকা আবশ্যক। অনেক রচনার মুখ্য উদ্দেশ্য সৌন্দর্য। সৌন্দর্যের স্থলে শব্দের একটু অসাধারণতা সহ্য করতে হয়। প্রথমে দেখা দরকার লেখক যা বলতে চান কোন ভাষায় তা সর্বাপেক্ষা পরিষ্কাররূপে ব্যক্ত করা সম্ভব। যদি সরল প্রচলিত কথাবার্তার ভাষায় তা সর্বাপেক্ষা সুস্পষ্ট ও সুন্দর হয় তবে উচ্চ ভাষার দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি এক্ষেত্রে টেকচাঁদী ভাষায় সকলের অপেক্ষা কার্য সুসিদ্ধ হয়, তবে তাই ব্যবহার করা উচিত । যদি তদপেক্ষা বিদ্যাসাগর বা ভূদেববাবু প্রদর্শিত সংস্কৃতবহুল ভাষায় ভাবের অধিক স্পষ্টতা এবং সৌন্দর্য হয় তবে কথ্য ভাষা ত্যাগ করে ঐ ভাষাই গ্রহণ করা প্রয়োজন। যদি তাতেও কাজ না হয় তবে আরো উপরে উঠা যাবে। বলবার কথাগুলো পরিস্ফুট করে বলতে হবে- যতটুকু বলার আছে সবটুকু বলবে। ইংরেজি, ফারসি, আরবি, সংস্কৃত, গ্রাম্য, বন্য- যে ভাষার শব্দ প্রয়োজন তা গ্রহণ করতে হবে। অশ্লীল ভিন্ন সব শব্দই গ্রহণ করা যাবে।
মন্তব্য: ভাষা সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়। অসুন্দর হলে চলবে না। মানুষ সুন্দরের পূজারী। সুন্দরের জয় সর্বত্র, অসুন্দরকে সকলেই ঘৃণা করে। সুতরাং সাহিত্যের ভাষা যা অসুন্দর তা মানুষের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে অক্ষম।