মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির প্রভাব আলোচনা কর।

অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির ভূমিকা আলোচনা কর ।
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির অবদান বর্ণনা কর।
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির ইতিবাচক প্রভাব বর্ণনা কর।
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির অবদান সংক্ষেপে বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই জীবনধারণ, বংশবৃদ্ধি, অস্তিত্ব ও সামাজিকতা রক্ষার জন্য মানুষকে কতিপয় চাহিদা পূরণ করতে হয়। এসব চাহিদা পূরণ ছাড়া মানুষ সমাজে সভ্য মানুষ হিসেবে বাঁচতে পারে না।মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় চাহিদাসমূহকেই মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়। মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি কৃষিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত।তাই কৃষিকাজ বাংলাদেশের মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির প্রভাব : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত।বাংলাদেশের অর্থনীতিও কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই বাংলাদেশের মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির প্রভাব আলোচনা করা হল :
১. খাদ্য চাহিদা পূরণ : মানুষের প্রথম মৌল মানবিক চাহিদা হল খাদ্য। কেননা খাদ্য ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষের এ খাদ্যের যোগান দেয় কৃষি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। ১৪ কোটি জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারে না এদেশের কৃষিব্যবস্থা। কারণ ক্রমান্বয়ে কৃষিজমি হ্রাস, অনুন্নত কৃষিব্যবস্থা, প্রকৃতি নির্ভরতা, সার ও বীজের অভাব, উন্নত কৃষিজ্ঞানের অভাব ইত্যাদি। সেজন্য বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৫-২০ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি হয়। তবে ২০০০ সালে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি, সার ও বীজের ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব। সুতরাং খাদ্যের মত মৌল মানবিক চাহিদা মেটাতে কৃষিব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
২. বস্ত্রের চাহিদা পূরণ : খাদ্যের পরেই মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা হল বস্ত্র। বস্ত্র ছাড়া মানুষ সভ্য সমাজে চলতে পারে না।তাছাড়া ইদানিং বস্ত্ৰ আভিজাত্য ও রুচির পরিচয়ও বহন করে। বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু চাহিদা মেটাতে কৃষিব্যবস্থা ভূমিকা পালন করে। এদেশে শিমুল ও কার্পাস তুলা চাষ হয়। এ থেকে সুতা পাওয়া যায়, সে সুতা দিয়ে বস্ত্র তৈরি হয়। তবে বস্ত্র চাহিদার সবটুকু কৃষিব্যবস্থা পূরণ করতে পারে না। সেজন্য প্রতিবছর বিপুল ব্যয়ে বহু আমদানি করতে হয়।
৩. বাসস্থানের উপকরণ সরবরাহ : বাসস্থান মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা। একটি সুন্দর বাসস্থান মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি আরাম ও শান্তিতে বসবাসের সুযোগ দেয়। বাংলাদেশে বাসস্থান তৈরির উপাদান সরবরাহ করে কৃষি। যেমন- বাঁশ, কাঠ, ধানের খড়, পাটখড়ি, গোলপাতা, ইক্ষু পাতা ইত্যাদি বাংলাদেশের গৃহনির্মাণে ব্যবহৃত হয়।কৃষি ব্যবস্থা এসব উপকরণ সরবরাহ না করলে বাসস্থান নির্মাণে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হতো। তাই বাসস্থানের চাহিদা মেটাতেও কৃষির ভূমিকা রয়েছে।
৪. চিকিৎসা : চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা। বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা চিকিৎসার উপকরণ সরবরাহ করে থাকে। ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার বেশিরভাগই কৃষি থেকে আসে। তাছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান গাছ গাছড়া হতে সংগ্রহ করা হয়। যেমন- আমলকি, হরিতকি, বহেরা ইত্যাদি।
৫. চিত্তবিনোদন : চিত্তবিনোদন মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা। বাংলাদেশের কৃষি এদেশের মানুষের চিত্তবিনোদনের চাহিদাও পূরণ করে থাকে। কৃষকরা ফসল বোনা ও কাটার সময় একযোগে গান গেয়ে চিত্তবিনোদনের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
৬. শিল্পের কাঁচামাল যোগান : একটি দেশ কতখানি উন্নত তা নির্ভর করে ঐ দেশের শিল্পের উপর। বাংলাদেশের শিল্প উন্নত নয়। এর কারণ পুঁজি ও কাঁচামালের অভাব।যে শিল্পকারখানাগুলো আছে তাও কৃষিনির্ভর। এসব শিল্পের কাঁচামালের যোগান দেয় কৃষি। যেমন- পাটশিল্প, বস্ত্রশিল্প, চিনিশিল্প ইত্যাদি।
৭. কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে : বাংলাদেশে কৃষি ছাড়া কর্মসংস্থানের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তাই এদেশে বেকারত্বের হারও অনেক বেশি। কৃষিকাজে শতকরা ৮০ ভাগ লোক নিয়োজিত আছে। এরপরও এদেশে ৩ কোটি লোক বেকার। তাই একথা বলা যায় যে, কৃষি কাজে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক নিয়োজিত রাখার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে কৃষি।
৮. রপ্তানি বৃদ্ধি : বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য সাধারণত কৃষিনির্ভর। ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঘাটতি ব্যাপক। যেসব জিনিস রপ্তানি করা হয় তার বেশিরভাগই কৃষিপণ্য। যেমন- কাঁচাপাট, পাটজাতদ্রব্য, চা, তামাক, চিংড়ি,
শাকসবজি ইত্যাদি। যদি এসব কৃষিপণ্য না থাকত তাহলে আরও বেশি বাণিজ্যিক ঘাটতি দেখা দিত।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই বাংলাদেশের মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কৃষির প্রভাব অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও ইতিবাচক। মূলত কৃষির জন্যই আমরা দু’বেলা দু’মুঠো খেতে ও পড়তে পারি।